Thursday, October 15, 2015

কৈলাসবাসীর কলকাতা যাত্রা


   
   
গুরুচন্ডা৯ পুজো ইস্পেশাল





কৈলাসবাসীর কলকাতা যাত্রা

(১)

মা আসেন প্রতিবছর। মা জানতেও পারেন না দেশের কী অবস্থা, দশের কী হাল। তবুও দেশ ও দশ প্রতি অণুপল শুনতে থাকে মায়ের আগমনের প্রতিধ্বনি। এবার মা আসছেন বদলের বঙ্গে। সেটাই বড়কথা। মায়েরও হাওয়াবদল হবে আশা করা যায়। কিন্তু প্রতিবছরের মত বাজারের দাম বদলায়না। রাস্তাঘাট সারাই হয়না। রাজনীতির অশুভ আঁতাত, খরা-অতিবৃষ্টির টানাপোড়েনে রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি, প্লাসটিক না পেপার, পরীক্ষার পাশফেল, রিসেশান-ইনফ্লেশান চাপানউতোর সবকিছু চাপা পড়ে যায় কৈলাশ এন্ড কোং দের আগমনে। ওবামা-ওসামার উত্থান-পতনে, বিস্ফোরণে, দু:খের যজ্ঞে আহুতি দেয় দেশবাসী। সব জটিল প্রশ্নের টেস্টপেপারের মুখোমুখি হতে হয় কৈলাস পরিবারকে। হাতের পাঁচ, বাজারে হাজারের কান্না তো আছেই। খরস্রোতা তিস্তার জল বয়ে চলে প্রতিদিনের নিয়মে..

রথের পরেপরেই প্লেনের টিকিটটা সস্তায় কেটে নিয়েছে তার বড়ছেলে। বড়ছেলে এবার বলেছেন বঙ্গে এসে জিমে যাবেন ঐ ক'দিন। তা শুনে বড়মেয়ে বললে "ঐ ক'দিনে কী হবে রে? তোর যা অবস্থা এবার একটা ট্রেডমিল সিংহের পিঠে করে নিয়ে আয় বরং।'

ছোটমেয়ে বলে "এখন তো ওখানে সব সুগারফ্রি। তোর চিন্তা নেইরে দাদা।'

বড়মেয়ে বললে "তোর নিজের চুলগুলোর দিকে তাকা একবার। আর সময় নেই। এবার একটু যত্নটত্ন কর আর তার সাথে দেখ রাত জেগে পড়েপড়ে চোখমুখের কী অবস্থা করেছিস...'

ছোটমেয়ে বললে "মহালয়ার পরেও তো দিন সাতেক সময় থাকে রে দিদি। তখন সব হয়ে যাবে। এরোমা থেরাপি করে নেবখনে।'

শুনে মা বললে "বাপের একপয়সা রোজগারের মুরোদ নেই আর তাঁর ছেলেমেয়েরা ফূর্তি করে যা আছে তা ভাঙিয়ে খেয়ে শেষ করছে।'

বড়মেয়ে বললে "আহা মা, অমন কথা বলছ কেন? আমি তো বাবার যা ছিল সব ঠিকঠাক লগ্নি করেছি যাতে আমাদের এই সময়টায় একটু দুহাত তুলে খরচাপাতি করতে পারি।' ছোট ছেলেটা বলে উঠল "বাবা ভাঙ খান আমরা ভাঙিয়ে খাই।'

ছোটমেয়ে বললে "এই যুগে ডিজাইনার বুটিকের শাড়ি, হাবিবের হেয়ারকাট, গোল্ড ফেসিয়াল, তানিষ্কের গোল্ডেন হারভেষ্ট না করলে প্যান্ডেলে কেউ পাত্তাই দেবেনা।' মা বললে "ওখানে পাত্তা পেয়েই বা কী হবে? তোরা কি কেউ বিয়েটিয়ে করে আমাকে একটু শান্তি দিবি? স্থায়ী একটা সংসার পাতবি কখনো? আমাকে দেখ ঐ পাগলছাগল মানুষটাকে নিয়ে, ওর নেশাটেশা সব মেনে নিয়ে আজীবন কাটিয়ে দিলাম এখানে, তোদের সে ধৈর্য্য আছে? '

বড়মেয়ে বললে "দ্যাখো মা, বিয়ে করে সংসার পাতলেই কি মোক্ষলাভ হবে? স্টেটাস চাই বুঝলেনা? সোশ্যাল স্টেটাস। কৈলাসে ক্রোড়পতি হয়ে বসে থাকলে কিস্যুটি হবেনা। বেম্মা, বিষ্ণু, বাবার আওতায় থাকলেই হয়েছে। এখান থেকে পাততাড়ি গোটাতে হবে। বদলের বঙ্গে গিয়ে এবার সব দেখেশুনে আসব। অনেক হাউসিং প্রজেক্ট হচ্ছে গঙ্গার আশেপাশে। তাই তো ক'দিন আগে টিকিটটা কাটলুম আমরা। গিয়ে একটা বাড়িটাড়ি বুক করে আসব এবার। মোচ্ছব শুরু হয়ে গেলে সেখানে আর পথ চলাই দায়।'

ছোটমেয়ে বললে "ওখানে শুনেছি কোচিংক্লাসের খুব রমরমা। আমি তো কিছু না হোক গোটা দশেক ছেলে পড়িয়েই আমার হাতখরচা যোগাতে পারব।'

বড়মেয়ে বললে "আমি তো আর কিছু নাহোক ইনভেষ্টমেন্ট কনসাল্টিং করে বেশ রোজগার করতে পারব।'

বড়ছেলে বললে "আমি একটা মিষ্টির দোকানটোকান খুলে নিতে পারব। মিষ্টির বুটিক অর্থাৎ স্পেশালাইজড মিষ্টি থাকবে সেখানে। চকোলেট পান্তুয়া থেকে রাজকীয় রাতাবী, রাজকেশরভোগ থেকে আবারখাবো, সরপুরিয়া সরভাজা থেকে হৃদয়খুশ।'

ছোটছেলে বললে "হ্যঁ¡, শর্করাতেই তোমার ভাগ্যোদয় আর শর্করাতেই তোমার মুক্তি আলোয় আলোয়।'



(২)

"একটা বেস গীটার কিনতে হবে আমাকে। মোহনবীণা, রুদ্রবীণা অবসোলিট এখন। এখন মিউজিক মানেই ডিজিটাল, মিউজিক মানেই ইউটিউব। কিছু গানের বইয়ের অর্ডারও দিয়ে এসেছিলাম গতবছর। দেখি পাই কিনা। এবারে রবিঠাকুরের জন্মসার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপনে একটা সিডি বের না করলে আর মান থাবেনা স্টুডেন্টদের কাছে,' ছোটমেয়ে বলে বসলে।

মা বললে "সিডি মানে তো অনেক খরচাপাতি। গান রেকর্ডিং, মিউজিক এরেঞ্জমেন্ট তারপর পোস্ট প্রোডাকশান, পাবলিশিং।'

"আরে আমার একটা নয়াপয়সাও খরচা হবেনা। আমি হলাম গিয়ে বাগ্‌দেবী। কৈলাসের তথা সারাভারতের বীণাপাণি। আমি শুধু গাইতে চাইলেই হল। আর আমার এই সিডি রবিঠাকুরের সার্ধশতবর্ষে হিট হবেই' ছোটমেয়ে বলে। "সেবার দেখলেনা? একটা বই লিখব বললাম। শ'য়ে শ'য়ে প্রিন্টার আর পাবলিশার আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি হলাম গিয়ে একটা ব্র্যান্ড বুঝলেনা? তবে আমার এই বই আর সিডির রয়্যাল্টি দিয়ে আমি কিন্তু এবার ফেরার পথে ফরেন ট্রিপে যাব এই জানিয়ে রাখলাম তোমাদের, "ছোটমেয়ে আবার বলে বসলে। বড়মেয়ে বললে "বাবারে তোর তো দেখি খুব শখ।'

ছোটছেলে চীৎকার করে বলে উঠলে "কোলের মেয়েকে বাপ-মা আদর দিয়ে মাথায় তুললে অমনই হয়। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ফার্স্ট, গানের গলা সুমধুর এতসব করে করে বেম্মা, বিষ্ণু, বাবারা কি কম আদিখ্যেতা করলে! আমার বেলাতেই বাবামায়ের যত ট্যাক্স বসানো। নবমীর রাতে আমি কিন্তু তন্ত্রে যাব। সেখানে আমার কত রাত হবে জানিনা, পরদিন ভোরের আগেই ফিরব। সেলফোন অফ থাকবে। আমাকে অযথা প্রশ্ন করবে না তোমরা, এই বলে রাখছি। দইকর্মার দিব্যি দিলাম। ভোর হলেই চলে আসব।'

বডভাই কান নাচিয়ে বললে "হ্যঁ¡, বাবা জানি জানি, তুমি দ্রাক্ষারসে অবগাহন করবে সে সময় তা এবার কত নম্বর গার্লফ্রেন্ডের সাথে নাচতে যাওয়া হচ্ছে শুনি? তাও যদি বুঝতাম একজন কেউ পার্মানেন্টলি তোকে ভালবাসে, তার চেয়ে তুই বরং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টটা শিখে নে এবার গিয়ে। যেখানে যা অনুষ্ঠান হবে বিয়ে থেকে গানবাজনার জলসা, পুজো উদ্বোধন থেকে বিসর্জন আর কৈলাসের রম্ভা-ঊর্বশীর নাচের শো ... সবকিছুতেই বড় কাজে লাগে। হাতে পয়সাও আসবে আর শেখাও হবে।'

"কী আর করি বল, তোর মত একটা সুমো রেস্টলার মার্কা ফিগার তো আমার নয়। সলমনের মত বাইসেপ্স, হৃত্তিকের মত ট্রাইসেপ্স, এক রকম ফিগার মেন্টেইন করছি এত বছর ধরে। মেয়েরা ফিদা না হয়ে পারবে কেন?'

মা বললে "এই শুরু হয়ে গেল। যাবার আগে এত কথা কাটাকাটি না করলেই নয়? আমার এমনিতেই এখন এত ভুল হয়ে যায় আর তোরা ঝগড়া করলে আমি আরো ভুলে যাব। যাবার আগে তোদের বাবার রোজের সিদ্ধির স্যাশেগুলো নন্দীদের হাতে দিয়ে যেতে হবে। ভৃঙ্গিকে বলে দিতে হবে একটার বেশী ধুতরো ফল যেন না দেয়। বড়মেয়েটা আমার ঠিক বলেছে এবারে গঙ্গার আশেপাশে একটা বাড়ির ব্যাবস্থা না করে এলেই নয়। তোদের বাবার বয়েস হচ্ছে। কতদিন ওঁকে এভাবে ফেলে আর বছর বছর যাওয়া যায়।'



(৩)

বড়মেয়ে বললে "আচ্ছা মা, তুমি কি এবারেও অত ভারি সিল্ক পরে থাকবে ঐ ক'দিন? আমি কিন্তু পরছিনা এক্কেবারে। যা গরম সেখানে। এই ঠান্ডার থেকে গিয়ে আমার একেই দম আটকে যায় কেমন ক্লস্ট্রোফোবিক লাগে। আমি এবার সুপারনেট, হালকা গোলাপী রঙের। আর তুমি বরং পিওর শিফন পরো। অমন সাদা খোলে লাল পাড়ও পাওয়া যায়। নো জরি, নো সেকুইন্স। ওসব আউট ডেটেড। সিম্পল প্রিন্টেড শিফন ৪০ গ্রাম। হ্যঁ¡রে, তুই কী পরবি ঠিক করলি এবার?' ছোটবোনকে জিগেস করলে।

"আমি একটা ঢাকাই মসলিন পরব হলুদ রঙের। বঙ্গের উৎসবে ঢাকাই মসলিন না পরলে ইজ্জত থাকেনা। একে তো বাবা চাকরী-বাকরী করেনা, নেশাটেশা করে বলে মামারবাড়ির সকলে আমাদের একটু হেয় করে। সেখানে শিফন-টিফন, সুপারনেট পরলে মান থাকবে মা? তার চেয়ে চলো তিনজনেই ঢাকাই পরি। হালকাও হবে ইজ্জতদারও হবে,' ছোটমেয়ে বললে।

"ভাবছি এবার আর দশহাতার ব্লাউজ করাব না। আমার স্পন্ডেলোসিসের ব্যাথাটা যা বেড়েছে অতগুলো হাতা পরতে বড্ড কষ্ট হয়। আর ঐ গরমে অতগুলো হাতার ব্লাউজ পরে থাকা যে কি ঝকমারি!' মা বললে।

"তোমায় তো কতবার বলেছি মা, এখন ওসবে কেউ কিস্যু ভাববেনা। এখন ওখানে বুড়িরাও বাড়িতে দিনে নাইটি পরে, বাজারে জিনস পরে, রাতে লঞ্জারে পরে। বাড়ির বৌয়েরা বিকিনি বেশে সুইমিং পুলে যায়। ওরা এখন আগের থেকে অনেক লিবারাল। কেউ শাঁখা সিঁদুর পরেনা,' ছোটমেয়ে বললে।

"তোরা যতসব সাজগোজ নিয়ে পড়ে আছিস এখনো, ওদিকে জানিস? ফেসবুকে নাম না থাকলে এয়ারপোর্ট থেকে বের করে দেবে আমাদের। প্রত্যেকের ছবিশুদ্ধ একাউন্ট খুলে ফেল আগে,' ছোট ছেলে শশব্যাস্তে এসে ঘোষণা করলে।

"বেশ তো, আমার তাতে আপত্তি নেই। শুনছিলাম ফেসবুকে নাম না থাকলে স্বর্গেও আর ঠাঁই হবেনা আমাদের,' মা বেশ চিন্তায় পড়লেন।

"হ্যঁ¡রে এই নেটটা কি দিয়ে তৈরী রে?' বড়ছেলে জিগেস করলে। "আমার ইঁদুরটার সুবিধে টুবিধে হবে তো?' ছোট বোনটি হি হি করে হেসে বললে "এ নেট সে নেট ন, এ জাল মহা জাল, যন্ত্রজাল। ইঁদুরে না পারে কাটতে, চোরে না পারে ভাঙতে তবে হ্যাকার পারে টপকাতে।'

"হ্যাকার কী রে?' মা বললে।

"নেটের আতঙ্কবাদীদের হ্যাকার বলে,' মেয়ে বলে দিলে মা'কে।

"আরেকটা কথা আজকাল খুব শুনছি এখানে, দাঁড়া মনে করি। সাইবার কোথায় রে? পুরী-মোহনভোগ কী কসম! কাউকে বলবনা। প্লিজ বল আমাকে,' মা বললে।

অমনি সবজান্তা বড়ছেলেটা শুঁড় নাচিয়ে জবাব দিলে, "এ মা তাও জানোনা? মামাবাড়ি যাইবার, লাড্ডু খাইবার আর অপরাধের সাইবার।'



(৪)

রবিঠাকুরের জন্মসার্ধশতবর্ষে তাঁর মৃত্যুদিনে শ্রাবণ-শ্রাদ্ধ সমারোহের যা ঘটা শুনছি তাতে এবার উনিই নাকি হবেন থিম নাম্বার ওয়ান। কুমোরপাড়ায় নাকি সীসে-বর্জিত রঙ লাগানো হচ্ছে যেটা হবে ইকোফ্রেন্ডলি থিম নাম্বার টু। ওসামার পতন আর ওবামার উত্থানেরও থিম হবে প্যান্ডেলে যা হবে থিম নাম্বার থ্রি। শোনা যাচ্ছে, ভারতের বিশ্বকাপ আনা থেকে ইংল্যান্ড সফরে মুখে চুনকালি হবে থিম নাম্বার ফোর। বদলের বঙ্গে পরিবর্তনের জোয়ারে দিদি নাম্বার ওয়ান হবেন থিম নাম্বার ফাইভ। আরো শোনা যাচ্ছে লোকপালে হাওয়া দিয়ে রামলীলা ময়দান হবে থিম নাম্বার ছয়। তারপর বাঙালীর মায়ের চেয়ে মেসির জন্যে যা দরদ দেখছি তাতে মনে হয় মেসির বঙ্গে আগমন তো আছেই। এই থিম পুজোর শুচিবায়ুতায় মা তার ছেলেপুলেদের নিয়ে ভালোয় ভালোয় এসে আলোয় আলোয় ফিরে গেলে বাঁচি।

থিম থিম করে পাগলু হয়ে পুজোয় চমক হবে। দেব-দেবীদের চক্ষু চড়কগাছ। হিংসায় উন্মত্ত ধরায় শান্তির বাণী বর্ষাতে এসে সব প্ল্যান ভন্ডুল। পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তায় প্যান্ডেলের খুঁটি পোঁতা হবে। হোতারা গর্ত খুঁড়েই খালাস হবেন। মা চলে যাবার পর সেই গর্তগুলোর কী হবে তা নিয়ে কেউ ভাববেন না একটিবারও। একই পাড়ায় চারটে দলের আলাদা আলাদা পুজো হবে। দলবাজির মা, রকবাজির মা, রঙবাজির মা, দাদাগিরির মা। আফটার অল ভাগের মা বলে কথা। গঙ্গা পাবেন অবিশ্যি। কিন্তু গঙ্গার কী হবে? একেই তো বুঁজে আছে পর্যাপ্ত প্লাস্টিকে। ক্লিন কোলকাতা, গ্রিন কোলকাতা থিম ততক্ষণে বিসর্জন। মহানগরের ড্রেনগুলি আবার ভর্তি হয়ে যাবে। ঠাকুর দেখবেন প্রচুর দর্শনার্থী। জলের বোতল, কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল, কফির কাপ, আইসক্রিমের কাপ, আরো কতকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা রেখে চলে যাবেন এই মহানগরের রাস্তাঘাটে। তেরঙ্গা, গুটখা, শিখরময় হয়ে উঠবে এই মহানগর। চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙে মাইক্রোফোনের স্পীকারে গান বাজতেই থাকবে উচ্চৈ:স্বরে। হোতারা বলবেন "বাজাতে রহো'। সদ্যোজাতের কর্ণপটাহে তালা লাগবে সেই শব্দে। আলোর রোশনাই কোজাগরীর চাঁদের জোছনাকে আড়ালে রাখবে। বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ! কত চাই এসময়ে? জয়েন্ট পরীক্ষার আগের দিন না হয় অন্ধকারে ডুববে বঙ্গ তাই বলে পুজোতে আঁধার আমার ভালো লাগবে কি? রমরমিয়ে ব্যবসা চলবে ট্রান্সফ্যাটের। আবার ওজন বাড়বে বাঙালীর। পুজো তো রোজ রোজ হবেনা। তাই বলে কি রসনা অতৃপ্ত থাকবে? চক্ষুশুদ্ধি হবে প্যান্ডেল হপিং করে। জিনস-কুর্তা, কুর্তি-কেপরি, স্কার্ট-লাচ্ছায় লাস্যময়ী, হাস্যময়ীরা মাতাবেন ম্যাডক্স স্কোয়ার, তিনকোণা, দেশপ্রিয়, বাদামতলা, মুদিয়ালি। ছিনেজোঁকের মত মানুষ ভীড় করবে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। ততক্ষণে মা উধাও সেই প্যান্ডেল থেকে। পড়ে থাকবে মৃন্ময়ী মূর্তি। চিন্ময়ী মায়ের বিরহী আত্মাটুকু পাড়ি দেবে দয়িত ভোলেবাবার কাছে। ভীড়ভাট্টা থেকে রক্ষা পাবে বলে। কোলকাতার ভূষণ হবে দূষণ। মাননীয় নেতারা বিজয়া টিজয়া সেরে টেরে সিদ্ধান্ত নেবেন। মহানগরকে দূষণ মুক্তকরার জন্য অনেক মিটিং হবে। ততক্ষণে শারদসম্মান অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি শেষ।

আকাশতলে, অনিলে জলে, দিকে দিগন্তলে, বনে বনান্তরে বাজতে থাকবে "বলো দুগ্গা মাইকী জয়! আসছে বছর আবার হবে!'

নাড়ু মুখে, পান হাতে, সিঁদুর খেলে মা মুচকি হেসে বলবেন "আবার আসিব ফিরে ধানসিঁডিটির তীরে এই বাংলায়।'

সিংহমশাইয়ের পিঠে চেপে মা, মায়ের দু জোড়া ছেলেপুলে, একাই একশো উগ্রপন্থী মহিষাসুর আর এক গন্ডা নির্বিবাদী পশুপাখি বাক্স প্যঁ¡টরা প্যাক করে রেডি হয়ে জুলজুল করে দেখছে তখন। কোথায় পাব বলরাম-যুগল? কোথায় পাব বাঞ্ছারামের পান্তুয়া? হায়রে সেনমশাইয়ের মিষ্টি দৈ! যাদবের দিলখুশ আর কেসি দাসের রসোমালাই।

মা বললেন "চলো চলো চলো সবে, কৈলাসে গিয়ে হবে, চমরীর দুধে মিষ্টিমালাই, বানাবো সকলে খাবে।'

বড়মেয়ে বললে "শুধু যাওয়া আসা, শুধু পয়সা খসা।'

ছোটমেয়ে বললে "চল রাস্তায় নামি ট্রামলাইন...'

বড়ছেলেটা বলে বসলে "আহা কতদিন শুনতে পাবনা এ সব, বড্ড মিস করব রে!'

মা কোলের ছেলেকে বললেন "কী রে তুই কিছু বল?।'

অমনি ছোটছেলে বললে "আমাকে আমার মত থাকতে দাও মা, কিচ্ছু ভাল্লাগছেনা।'

পাড়ার ছেলেমেয়েরা দৌড়ে এসে খবর দিল "আই এসডি কল এসেছে মাগো, একটিবার চলো। বোধহয় কৈলাস থেকে শিবুদা ফোন করেছে।'


(গুরুচন্ডা৯, পুজো ইস্পেশাল-২০১১  )

No comments:

Post a Comment