Thursday, October 15, 2015

তুমি মিছে ভোলানাথে দূষণা মা !


এই নিয়ে বদলের বঙ্গে ভোলানাথের গুষ্টির  তৃতীয়বার  পদার্পণ । ভোলানাথের অবিশ্যি তাতে কোনো হেলদোল নেই।  মোটামুটি আগেভাগেই সস্তার টিকিট কেটে রাখা ছিল তাই এবার ওয়েটিং লিষ্ট কনফার্ম হবার পর মায়ের ছানা-পোনাদের আনলিমিটেড আনন্দে আপাতত অবগাহন । এবার একেই ডিজেল আগুণ তাতে আবার প্রত্যেকের নিজস্ব বাহন এক একটা  ! মায়ের খুব চিন্তা । সবশুদ্ধ একডজন পরিবারিক সদস্য । সিংহ তো দেখন হাসি ! কোনো বারণ শুনবেনা সে । আসা চা-ই-ই !  একে কোলকাতায় পার্কিং স্পেস নেই !  সিংহের মমতাময় মুখখানা দেখে মা যে গলে জল হয়ে যান । আর বেশি বাধা দিলে সে প্রায়ই মা'কে ইমোশানাল ব্ল্যাকমেল করে বসে ।  "সেদিন আমি না থাকলে জিততে কি করে? আমি সেদিন খ্যাঁকম্যাক করে না গর্জালে রেপিষ্ট অসুরটা তোমাকে ছেড়ে দিত বুঝি?  আর আমারো তো একটু হাওয়াবদল চাই না কি ! সেই কবে থেকে এই ঠান্ডার দেশে এয়েচি বলত ! মুখ বুঁজে পড়ে রয়েচি ! এখানে আমার না হয় কোনো সিংহীর সাথে ডেটিং না হয় মেটিং ! এখানে আমি বৃদ্ধ জরদগবের মত হয়ে গেলাম ! নিজেরা সব দুধ-ফলাহার খায় আমারো এখন সেই দশা । এট্টু বেড়াতে যাব তাতেও ট্যাক্স বসাতে হবে ?  যাওনা ঐ শহরে রাতবিরেতে ভীড়ের মাঝে তোমার ঐ ফুটফুটে সেক্সি মেয়েদুটোর ইজ্জত নিয়েও টানাটানি হয়ে যেতে পারে । তখন  তোমার ছেলেমেয়েদের ঐ পাখিগুলো  কি করে সামাল দেয় দেখব !"
 মা অগত্যা কেতোকে বলেছিলেন " নে বাবা , সিংহর টিকিটটাও কাট বাবা ! ও বান্দা নাছোড়"
 কেতো একগোছা ময়ূরের পালক নিয়ে ঝাঁটা বানাচ্ছিল । গতবার হ্যারিপটার দেখে এসে তার সাধ হয়েছিল ঝাঁটায় চড়ে সাঁ করে একবার পার্কস্ট্রীট পাড়ার আকাশে চক্কর মেরে আসবে ।  সে বললে  "মা, Chill, Chill !  আমি আজই অনলাইন টিকিট কেটে রাখছি সকলের "
গতবছর মায়ের পেয়ারের  মেয়ে সরো সব ভাইবোনেদের নামে একটা করে ক্রেডিট কার্ড করে দিয়েছে
লখ্যু তা দেখে বলেও ফেলেছে " ভরাডুবি হল মাগো, এবার বাবার আবারো বদনাম হয়ে যাবে । ক্রেডিট কার্ড হাতে পেয়ে কৈলাস থেকে কোলকাতা আসা-যাওয়ার পথে ওরা আদেখলার মত আনলিমিটেড শপিং করবে আর ক্রেডিট লিমিট ক্রস করে গেলে বাবার হাতে হাত কড়া !  একে তো ব্যাঙ্করাপ্ট বাবা তায় আবার আমরা তাকে ভাঙিয়ে খাচ্ছি"
সেই শুনে মুচকি হেসে গণশা বলেছিল "বাবা ভাঙ খান, আর আমরা ভাঙিয়ে খাই " 
সরো এবার বলেছে বাহা শাড়ী চাই-ই ।
শুনে লখ্যু বলেছে " আহা! কি এমন বাহা শাড়ি! আমি কিন্তু  ঘিচায় সঁপেছি প্রাণ ।
সরো বললে " গতবারে গিয়ে স্বর্ণযোজনা স্কিমে পোষ্টডেটেড চেক দিয়ে এয়েচি সেটা এবার উঠবে । আমি কুন্দনের একটা সেট নেব "
লখ্যু বললে "আমার ঝাঁপিটা এবার বদলাতে হবে । ম্যাগো ! সেবার রূপোর ওপর সোনার জল করিয়ে ছিলাম । আসার পথে বিষ্টি লেগে সব ধুয়ে উঠে গেল "
মা বললেন " আমি এবার আর দশহাতার ব্লাউজ পরবো না রে ! একে খরচাপাতি বেড়েছে তাতে বড্ড গরম ওখানে ।"
সেই শুনে সরো বললে " বলি আট্টা হাতে কি পরবে শুনি!মা বললেন " এবার গিয়ে একটু খোঁজ নিস না তোরা । সব মিটে গেলে কাটিয়ে আসব বাকী হাতগুনো । শুনেছি ওখানে বদ্যিরা ধন্বন্তরী । আট্টা হাতের অপারেশন করতে চারটের মোটে দাম নেবে । বাই ওয়ান, গেট ওয়ান ফ্রি । এই বাজারে এর চেয়ে আর ভালো ডিল কি হয় বল্‌"
গণশা বললে "মা গো ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্তছেলে , ঠিক একটা ব্যবস্থা হবেখন "
কেতো বললে "দেখো আমি কিন্তু নবমীনিশিতে তন্ত্রে আনপ্লাগড , কেউ আমাকে ডিসটার্ব করো না যেন, আগেই বলে দিলুম । 
গণশা বললে "হ্যাঁ, সে তো শরীরের যত্ন দেখেই বুঝতে পারছি "
কেতো বললে "হ্যাঁ, মায়ের  হেবি ওয়েট সন্তান তুমি, সারাদিন শর্করায় মজে আছো "
গনশা বললে "কেলিনু  দ্রাক্ষাকুঞ্জে,  ভুলি পরিবার পরিজন "
কেতো বললে "আমি সর্বদা স্টে ফ্রি, কেয়ার ফ্রি আর স্বাস্থ্যরক্ষার্থে সুগারফ্রি " 
মা বললেন "আবার শুরু করে দিলি তোরা তেঁতুল তলার বিষ্টি"
কেতো বললে " মা,  Cool! Cool ! relax! 
"ফেসবুকে শুনছিলাম পাড়ায় পাড়ায় পুজোর লড়াই শুরু হয়েচে । থিমপুজোর শুচিবায়ুতায় আম আদমীর ওষ্ঠাগত পরাণ ।   একে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আলোর ত্রিশূল তাতে আবার চারধার নীলিমায় নীল ! বেঁড়ে হবে এবার পুজো কি বল ? তবে জিনিষের দাম যা বেড়েছে তাতে মনে হয় হিমঘরের ফলসবজী কিছু সাথে নিয়ে গেলে ভালো হয় । এত্তগুণো লোক আমরা চড়াও হব এই বাজারে.." লখ্যু বললে ।
সেই শুনে সরো বললে " তোর যত বেশি বেশি । জিনিষের দাম তো কি । বছরে একবার মোটে যাই আমরা, তাও তো নেমন্তন্ন না কল্লে কি আর যেতাম । হাতেপায়ে ধরে সেই নতুন বছরের পঞ্জিকা হাতে নিয়ে ওরা জপায় বাবাকে । আর সারাবছর মাধ্যমিকে আমার ডাক, সেনসেক্স পড়লে তোর ডাক  তার বেলা ??? বেশ করব যাব । তোমরা খরচাপাতি কম করো । সারাই করা রাস্তাগুলো খুঁড়ে বাঁশ পুঁতোনা ! থিমপুজোর ছুঁচিবাইতে মেতোনা । একটা পাড়ায় চারটে করে দলবাজির পুজো করবে আর আমাদের ফল-পাকড়ের বেলায় যত খরচা কমানো?   রাখো তোমার ফেসবুকামি " 
"ঠিক বলেচিস, এ পাড়া দেখাচ্ছে ওকে । এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ । কেবল দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মত ফুলবি'র পুজো এখন । যত্তসব !   গণশা বলে বসলে ।
কেতো বললে " তা যাই বলো আর তাই বলো, এবার কার্তিকে পুজোতে  ব্যাপক ওয়েদার হবে । আর আমার তো শুধু যাওয়া আর আসাই সার । গিয়েই আবার আসতে হবে ।  ঠান্ডায় খেয়ে-বেড়িয়ে, ঝাড়ি মেরে সুখ  !
হ্যাঁ, আর তন্ত্রে সুখ, মন্ত্রে সুখ ! গণশা বললে  
ওখানে গেলে ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রবিঠাকুরের গান শোনা যায়। ভোরবেলায় শুনতে পাবে আজ জ্যোত্স্নারাতে সবাই গেছে বনে, দুপুরে শুনবে এদিন আজি কোন্‌ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, ভরাভাদরের বিকেলে শুনবে শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আর কার্তিকের হিমঝরা রাত্তিরে শুনতে পাবে তুমি ডাক দিয়েছ কোন্‌ সকালে কেউ তা জানেনা! শিল্পীদের গায়কীতে তোমার মনপ্রাণ তখন কানায় কানায়...  সরো বললে 
তোমাদের প্রত্যেকের ছবি আর পরিচয় পত্তর চাই কিন্তু। এবারে ওটা ম্যান্ডেটরি। গণশা বললে।
কেতো বললে পাসপোর্টে তো আছেই সবকিছু। না হলে ওখানে গিয়ে নতুন সিম, তারপর সেলফি ...ক্লিক ক্লিক অর সেভ এজ...সেন্ট টু....  ওরা এখন এসবে খুব চোস্ত!
লখ্যু বললে, মানে নিজস্বী ? আর হবেনা? সারাবিশ্ব যখন কম্পু-জ্বরে কাহিল তখন ওরা রক্ত দিয়ে অটোমেশন রুখেছিল। এখন দিন বদলেছে, ওরাও বদলেছে। বুঝেছে, গতি নাই, গতি নাই, কালী মায়ের  চরণ বিনা গতি নাই, গতি নাই।   
তবে আমি কিন্তু অটোতে এবার আর উঠছিনা বস্‌! গণশা বেশ ঝেঁঝেই বললে। অটোবাবুগুলো গতবার আমার শুঁড়  ধরে এমন ঘুরিয়ে দিয়েছিল, এখনো মাঝেমাঝেই ব্যথাটা আমাকে বড্ড কষ্ট দেয়। খুচরো চাই তাদের্! আমি যত বলি আজকাল কেউ দানপত্রের বাক্সে খুচরো দেয়না, সকলে বড় নোট দেয়, আমি ভিনদেশে থাকি, কোথায় পাব খুচরো, সে কিনা আমার শুঁড়টা ধরে বলে,আগে খুচরো দাও, নয়ত ছাড়ব না...   
কেতো বললে, যেমন অটোতে ওঠা! ঠিক হয়েছে তোমার। আমি তো বাপু রেডিও ক্যাবে খুব স্বাছন্দ্য বোধ করি।
তোমার ব্যাপার স্যাপার আলাদা। তুমি হলে গিয়ে কৈলাসনগরের মাল একখানা। চাইলেই লোক   ঢুকিয়ে দিতে পারো রাতবিরেতে....  মনে করলেই ধরে আনতে পারো যাকে ইচ্ছে তাকে, কেটে কুচি কুচি করে দিতে পারো। তোমার ব্যাপারটাই আলাদা বস্‌! 
 গণেশ মশকরা করছিল খুব। এমনিতেই সে তেমনি স্বভাবের। হঠাত হঠাত ভাইবোনদের পেছনে লাগে আর মায়ের সাথে ঠাট্টা করে। বলে বসল " মা জানো এবার নাকি আমাদের সকলের গায়ের রং নারায়ণের মত নীল করলে আর নীল পোষাক পরলে প্যান্ডেলে প্রচুর প্রণামী পাওয়া যাবে। ওখানকার সরকারের হুকুম। চারিদিক নীলিমায় নীল সেখানে। নীল আকাশের নীচে এই বঙ্গ , নীলে নীল তার সাঙ্গোপাঙ্গ.... তুমি জানোনা কি!  কেতো বললে, বস্‌, কবে থেকে আমি বলছি একটা ব্লু ফেডেড জিনস পরব, তা না মা কেবল সেই আদ্যিকাল থেকে আমাকে ধুতি পরিয়ে আসছে! বাঁচা গেল, এবার তাহলে আমি ব্লু জিনস!  কিন্তু দাদা তোর কোমরের যা পরিধি তুই কিন্তু জিনস পরার চিন্তাও করিসনা। বরং নীল ডিজাইনার ধুতি পর এবছর।  
রঙীন ধুতি? এ মাগো! তাও আবার বাংলায়?
এমা জানিসনা তুই? সকলে ওখানে এখন লাল, মেরুণ ধুতি পরে আর এবারে সক্কলে নীল ধুতি পরবে। 
ওদিকে মা চেঁচিয়ে উঠলেন " শিগ্‌গির আয় তোরা, তোদের বাবা কেমন করছে ! "
ছেলেমেয়েরা বললে "  এ আর নতুন কি মা, প্রতিবারই তো আমাদের যাবার সময় এগিয়ে এলে, আকাশতলে, অনিলেজলে, দিকে দিগঞ্চলে, সকল লোকে, পুরে যখন পুজোর বাজনা বেজে ওঠে বাবা ইনসিকিয়োরিটিতে এমন করেন, তুমি চাপ নিওনা মা " 

(আটলান্টা পূজারী আয়োজিত পুজোসংখ্যা অঞ্জলি)

No comments:

Post a Comment