Monday, August 8, 2016

একুশে যোগ

"বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারো" ... রবিঠাকুরের কথা। আর সেইস্থানেই তিনি খুঁজিয়া পাইলেন স্বামীজিকেও। স্বামীজি বলিয়াছিলেন জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ এবং রাজযোগের কথা। এবার উত্তিষ্ঠিত, জাগ্রত ভারতবাসী তথা সারা বিশ্বের মানুষ দেখিল চিরন্তন, শাশ্বত ভারতের ব্যায়াম যোগ। শেষমেশ রবিঠাকুর,বিবেকানন্দের আদর্শ মাথায় ল‌ইয়া স্বাস্থ্য‌ই জীবনের মূলমন্ত্র হইল। প্রথমে শৌচাগার তাহারপর ব্যায়ামাগার। অতএব প্রথমে বিয়োগচিন্তা তারপর যোগচিন্তা। না, না যোগের অর্থ জলযোগ নয় কোনোমতেই। প্রথমে স্বাস্থ্য তৈরী করা, তাহার পর "স্বাস্থ‌ই সম্পদ" এই আপ্তবাক্য মাথায় রাখিয়া "লাগো কাজে, কোমর বেঁধে, খুলে দ্যাখো জ্ঞানের চোখ, কোদাল হাতে খাটে যারা, তারাই আসল, ভদ্রলোক" । "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে" কি না তাহা হইল মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন তবে যোগাভ্যাসের এক্সোথার্মিক বা তাপনিঃসারক বিক্রিয়ার ফলে প্রচুর তাপশক্তি নির্গত হ‌ইবে । যোগাভ্যাসকে একটি তাপনিঃসারক বা এক্সোথার্মিক প্রসেস বলা যাইতেই পারে। ফলস্বরূপ প্রচুর স্নেহ ঝরিবে আকাশে, বাতাসে। চর্বি গলিবে, ঘামের দুর্গন্ধে টেঁকা দায় হইবে। সকল স্নেহ, শ্বেতসার যাইবে ব্যায়ামাগারের নয়ানজুলিতে। উহাকে সাফ করিতে রাজ্যে রাজ্যে কর্মসংস্থান হইবে । নয়ত অচিরেই দেশ আরো গরম হইয়া উঠিবে। কারণ স্নেহ অতি বিষম বস্তু। তাপ নিঃসারক। একেই বিশ্ব উষ্ণায়ণ তায় আবার মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হ‌ইতে ব্যায়ামের দরুণ যে ক্যালরি দহন হইবে তাহা কোথায় যাইবে? দেশের অভ্যন্তরেই ঘুরপাক খাইবে। শুধু দেশ নয় রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্তর্গত দেশগুলিতেও তাপ উদ্বৃত্ত হ‌ইবে। সবকিছু চিন্তা করিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জ বিবেচনা করিয়াছেন, পৃথিবী নামক গ্রহটির অভ্যন্তরে একটি সেন্ট্রালি কনট্রোলড এয়ার কন্ডিশানার বসাইবেন। পৃথিবীর মনুষ্যকুল যোগের সাথে ভোগ করিয়াও বাঁচিবে আর যোগাভ্যাস করিয়া বেঁচেবর্তে দিব্যদৃষ্টি লাভ করিয়া পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করিবে। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি বৃদ্ধি পাইবে। আমরা আরো "ভালো" করিয়া জীবনযাপন করিব। কলিযুগে মানুষ অভ্যাস করিবে কলিযোগ। সমাজের সর্বস্তরে মানুষ অনুভব করিবে নতুন যোগ। কি জানি কাহার যোগসাজসে যোগাচার্যের এরূপ যোগপ্রীতির বাণী মনুষ্যকুলে সঞ্চারিত হ‌ইল! তবে যোগাচার্যের ব্যায়ামাগারের যোগ-ঊর্মি আমাদের উভয়বঙ্গকেও ভাসাইয়া দিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আমি বাপু আদার ব্যাপারী। যোগ-বিয়োগের সাথে আমার পরিচয় হ‌ইয়াছিল পাটিগণিতে। ইহা ব্যাতীত এযাবতকাল বহু যোগের সাথে যোগাযোগ হ‌ইয়াছে আমার। যোগদিবস উদ্‌যাপনে আমার ইহার পূর্বে কোনো মাথাব্যথা ছিলনা। কিন্তু যত‌ই বয়স বাড়িতে লাগিল তত‌ই বুঝিলাম যোগ না করিলে জীবনের সবটুকু‌ই বিয়োগফল। অতএব এ ব্যাপারে কারোর বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ বা অভিযোগও না করিয়াই সামিল হ‌ইলাম সমগ্র বিশ্ব সহ আমার দেশ, তোমার দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার সহিত । যোগ না করিলে জীবন হ‌ইতে পিত্জা-বার্গার-মকটেলাদি, রোল-চাউমিন-ফুচকা-মিষ্টান্নাদি জীবন হ‌ইতে বিয়োগ দিতে হ‌ইবে। অতএব "এখন আর দেরী নয়, ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরগো, এবার যোগাসনে বসতে হবে, ন‌ইলে বিপদ হয়গো" যোগবলে তুমি যোগাচার্য আমি যোগমায়া। চলো, করেঙ্গে অ‌উর মরেঙ্গে। ডু অর ডাই। ভারতকে বিশ্বের দরবারে যোগ করিব আমরা। বিয়োগ করিব দ্বেষ, হিংসা। যোগবলে ছড়াইব শান্তির বাণী। অহিংসার বার্তা। হ্রাস পাইবে তোমার-আমার-সকলের মধ্যপ্রদেশ। বৃদ্ধি পাইবে হৃদয়ের উত্তরপ্রদেশ। আর যাহারা অংশ ল‌ইলনা তাহারা অচিরেই অধঃক্ষিপ্ত হ‌ইবে । "সবার পানে যথায় বাহু পসারো, সেইখানেতেই প্রেম জাগিবে আমারো ..." অতএব বাহু পসারিয়া, চক্ষু উন্মিলীত করিয়া বিশ্ববাসীর সহিত গত একুশে জুন আমরাও যুক্ত হ‌ইলাম। প্রেম বিলাইলাম। প্রেম জাগাইলাম। এক্ষণে বিশ্ব যোগদিবসের এই যোগকে আমরা কি যোগ বলিয়া আখ্যা দিব? আমার মতে ইহা স্বামীজির আরেক প্রকার কর্মযোগেরই অন্তর্ভুক্ত যাহাকে "প্রেম যোগ" বলিয়া অভিহিত করা যাইতেই পারে। কিন্তু উহাতে যুবসমাজ চিত্তবৈকল্যের হেতু ক্ষতিগ্রস্ত হ‌ইয়া পড়িতে পারে। যোগ হ‌ইল একপ্রকার সাধনা, আরাধনা, উপাসনা বা তপস্যার ন্যায় একাগ্রচিত্তের ফসল। সেখানে "প্রেম, ভালোবাসা" নৈব নৈব চ। অবশেষে রাজশেখর বসুর উদ্ভাবিত বিল্বকাষ্ঠের ল্যাঙট বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া বিশ্ব যোগ পরিষদ এবং জয় হনুমান একাডেমী সমগ্র বিশ্বের পুরুষগণের জন্য মাথাপিছু একটি করিয়া ঐ কৃচ্ছসাধনার ল্যাঙট অর্ডার দিয়াছেন। এবং অচিরেই কোনো এক পৃষ্ঠপোষক সেই টেন্ডারে সাড়া দিয়া ল্যাঙটের অর্ডার পাইয়াছেন বলিয়া জানিলাম । এবার প্রশ্ন হ‌ইল বিশ্বের যোগীরা ডাকযোগে সুদৃশ্য প্যাকেট সহযোগে ল্যাঙট পাইবে। ল্যাঙট পরিয়া যোগীর শরীরে ব্যথাবিষ বৃদ্ধি পাইবে। দেশবাসীর মনোযোগ সহকারে এহেন যোগাভ্যাসের দাপটে চিকিত্সকদের কিঞ্চিত ভয় হ‌ইতেছিল বটে। রোগীরা ঔষধ-যুক্ত না হ‌ইয়া মুষ্টি যোগ, হঠযোগ করিতেছিল। তাহাতে উহাদের ব্যাওসাপাতি লাটে উঠিতেছিল। বর্তমানে ল্যাঙটকান্ডে উহারা আবারো ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিবেন, সেটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস। এবার যোগিনী বা যোগমায়ারা কি পরিবেন? বিশ্ব যোগ পরিষদ বলিল, "কেন? উহারা বল্কল পরিবে, কাঁচুলি পরিবে। মাথার কেশরাজিকে পরিপাটি করিয়া শিরের সু-উচ্চে কবরী বাঁধিবে। ঠিক যেমন আদি-অনাদি ভারতবর্ষের আশ্রমকন্যারা করিতেন" জয় হনুমান দল বলিল " উহাতে যোগভ্রষ্ট হ‌ইবে পুরুষগণ। মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটিবে। যোগের বদলে বিয়োগ হ‌ইবে।" অগত্যা বিশ্ব যোগ পরিষদ ধার্য করিল নতুন উপায়। ঘোড়দৌড়ের মাঠে ঘোড়াদের চিত্তচাঞ্চল্য রুখিবার জন্য চোখের যেরূপ ঢাকনা ব্যবহৃত হয় তেমনটি ধারণ করিয়া পুরুষেরা যোগাভ্যাস করিবে। সেযাত্রায় যোগাভ্যাসে কোনো চিত্তচাঞ্চল্যের আভাসমাত্র পাওয়া যাইবেনা এই তাহাদের বিশ্বাস।

উত্তরবঙ্গ সংবাদ  ৩১শে জুলাই-২০১৬  

No comments:

Post a Comment