Friday, April 29, 2016

স্বর্গীয় রমণীয় (১০)

ই ডিজিটাল নারদ কিছুদিন আগেই এসেছিলেন আমাদের রাজসভায়। নির্বাচনী  প্রচার নিয়ে রাজমহলের অধিবাসীদের ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে।  মহাভারতের ইন্দ্রপ্রস্থ না হোক বিধানসভার সভাপর্বে নারদকে সেভাবে কেউ স্বাগত জানালনা।  বিলাসব্যসনে তৃপ্ত আলোময় এইরাজ্যের মানুষেরা তাঁকে এতটুকুনি সমাদর করলনা?  নারদ গেলেন ক্ষেপে। তিনি শুরু করলেন হুল ফোটাতে। ঠিক যেমন মহাভারতের যুগে যুধিষ্ঠিরের উদ্দেশ্যে তিনি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রশ্নবাণ তেমনি দিলেন । কেন জানি এইরাজ্যে পা দিয়েই তাঁর মনে হয়েছে এখানে এই এত আলো, এত আকাশ, নাজানি মানুষের সুখ এখানে উপছে পড়ছে। সারেসারে ত্রিফলা আলো ও মধ্যে মধ্যে নীল-সাদা জুঁইফুল আলোর   আলোর রোশনাই দেখেই নারদের মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথকে। তিনি বলে ওঠেন 
"হঠাত আলোর ঝলকানি দেখে ঝলমল করে চিত্ত্" 

 ট্যুইট এল "নারায়ণ, নারায়ণ"

নারদ বললেন, এখন আর বলিনা ঐ মন্ত্র। এখন শুধু নৈরাজ্য দেখলেই বলে উঠি, হুলায়ন, হুলায়ন।  নিজের হাতের বীণার তারে বহুদিন বাদে টঙ্কার তুলে গাইতে শুরু করলেন


"এনেছি মোরা, এনেছি মোরা রাশিরাশি লুটের ভার " 

রাজ্যের লোকেরা বলল, কি লুট, কেন লুট? কবে হল লুট?
কেউ বলল, আহা! লুট হতে যাবে কেন? বোঝোনা?
নারদ বলছেন যখন নিশ্চয়‌ই হরির লুঠ।  

হরির লুঠ‌ই বটে।

হুলায়ন, হুলায়ন !

নারদ বললেন,  তোমাদের রাজ্যে সকলে কুশল তো? সকলে খেয়েপরে বাঁচো তো? সকলের ঘরে শিশুরা শিক্ষা পাচ্ছে তো? স্বাস্থ্য পরিষেবা কেমন এখানে? 
ডাইনে বাঁয়ে এত উড়ালপুল নির্মীয়মান এ রাজ্যে। অথচ দিনেদুপুরে সেই উড়ালপুল ভেঙেও পড়ে যায়। ভদ্রমহোদয়গণ, আমার প্রশ্ন পূর্ণিমার চাঁদ যে শহরের আলোর রোশনাই দেখে মুখ লুকায় তেমন আলোকনগরীতে কি এটা কাম্য? 
কন্যাসন্তানদের শিক্ষার প্রসারে প্রত্যেক ছাত্রীর উচ্চশিক্ষায় এককালীন পঁচিশহাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে জেনে যারপরনেই প্রীত হয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ কন্যাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সেই টাকা এখনো পৌঁছায়নি জেনে আশ্চর্য হলাম। আর গাঁয়েগঞ্জে তো সেই টাকা দিয়ে কন্যার পিতা বিবাহের পণ দিচ্ছেন। এহেন পরিকল্পনার কি ভবিষ্যত? 
সারা রাজ্য জুড়ে  দেখি নতুন নতুন সাইকেলে ছাত্রছাত্রী মাঠঘাট চষে ফেলছে। অলিগলিতে সাইকেল চড়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে তারা। এতো দেখি শিক্ষার জন্য সাইকেল পেলাম টাকডুমাডুমডুম!
আর দুটাকা কিলো চালের কি হাল জানো তোমরা? চালের মধ্যে অর্ধেক কাঁকর, অর্ধেক চাল। সেই চাল ফোটাতে জ্বালানী ফুরায়। এতো দেখি ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির জোগাড়।  

এইসব দেখতে দেখতে কলিযুগ সত্যযুগ কিনা তা পরখ করবার উদ্দেশ্যে নারদ একবস্তা মোহর নিয়ে হাজির হলেন মর্ত্যে।এবার খবর  রটে গেল, তিনি নাকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আবির্ভূত হয়েচেন তাই সঙ্গে এত ধনসম্পত্তি তাঁর। কেউ ভাবল ধনপতি কুবেরের বাড়ি থেকে ফিরেছেন বলে এত ধনোপার্জন হয়েছে তাঁর।তাতে অবিশ্যি রাজমহলের কারোর হেলদোল হলনা। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে অর্থের প্রতি মর্ত্যবাসীর লোভ সম্পর্কে দেবকুল অতীব সচেতন।  অর্থ হল অর্থ। তা আবার যদি স্বেচ্ছায় কেউ দান করতে সম্মত হন তাতে দোষের কি?  দেবর্ষি নারদ মোহরের থলি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকতে প্রস্তুত হতেই ঝাঁকেঝাঁকে মধুমক্ষীর মত রাজ-অমাত্যগণেরা হাজির হলেন সেখানে। নারদ ভাবলেন...অর্থ অতি বিষম বস্তু! এইবেলা দ্যাখো, রাজকার্য ফেলে সকলে ঐ থলির মোহরের মোহে ছুটে এসেছেন। এদ্দিন আমার কোনো খোঁজ কেউ রাখেনি। এঁরা কেউ একটা ই-মেইলের সৌজন্যমূলক উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা আমার ওয়েবপেজে নিদেন একটা মন্তব্য, কিম্বা ভালোলাগার কথাও জানাননি। আর আজ দ্যাখো টাকার কথায় সকলেই আমাকে  চাইছে।রাজামশাই অবিশ্যি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কারণ তিনি আটঘাঁট বুঝে চলেন। সাদা কাপড়ে কাদা লেগে যাওয়ার চান্স শতকরা ১০০ ভাগ। চ্যালাচামুন্ডারা পেলে তিনি পাবেননা তা হয়না।  মনে মনে ভয়ও যে ছিলনা তা নয়। কারণ আসন্ন নির্বাচনে কালি লেগে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেলেও বিপদ আবার নির্বাচনী প্রচারে প্রচুর অর্থেরো প্রয়োজন।  অগত্যা নারদ‌ই সহায়। নারদ‌ই গৌরীসেন। "তোমরা আমাদের মোহর দাও, আমরা তোমার কাজে লাগব" এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে সব দুঁধে রাজমন্ত্রীরা নারদের মোহরের থলি থেকে একে একে প্রচুর মোহর পেলেন। 

Monday, April 25, 2016

স্বর্গীয় রমণীয়(৯)

ত্রিভুবন ঘুরতে ঘুরতে দেবর্ষি নারদ একদিন মহাভারতের পান্ডব রাজসভায় আসেন।পান্ডবগণ যথোচিত মর্যাদায় নারদমুণির অভ্যর্থণা করলেন। নারদের সেখানে আগমনের কারণ ছিল রাজনীতি বিষয়ক।  দেবর্ষি রাজার উদ্দেশ্যে একগুচ্ছ প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলেন। 
তিনি পান্ডবদের প্রশ্ন করলেন রাজাগণ কেবল অর্থচিন্তাতেই কালাতিবাহিত করছেন কিনা সেই নিয়ে। অর্থচিন্তার কারণে ধর্মচিন্তায় তাঁদের অনাসক্তি যেন না জন্মে এই ছিল নারদের চিন্তা। তিনি আরো বললেন, অর্থচিন্তাতো থাকবেই কিন্তু সেইসাথে রাজ্যের উন্নতিকল্পে বিবিধ উন্নয়নমূলক ক্রিয়াকর্মাদি যেমন, সেতুনির্মাণ, দুর্গনির্মাণ, পৌরকার্য্যাদি, জনপদ রক্ষণাবেক্ষণ...এইসব ঠিকমত সম্পাদিত হচ্ছে তো? কৃষি-বাণিজ্য-শিল্প-শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে ঠিকমত অর্থাদি ব্যয় হচ্ছে তো? রাজ্যের কোষাগারে আয়ব্যয়ের হিসাবপত্র ঠিকমত রাখা হচ্ছে তো? তার রাজ্য চালাতে গেলে রাজাকে অষ্টবিধ রাজকার্য সম্যকভাবে সমাধা করতে হয়।  তিনি সে ব্যাপারে বেশ স্বচ্ছ তো? 

 রাজ্যের মঙ্গলার্থে শত্রু-মিত্র সকলের সহিত রাজা সুসম্পর্ক বজায় রাখেন তো? রাজার বাক্‌সংয্ম, বিনয় এবং অসূয়াপূর্ণ ব্যাবহার‌ই কিন্তু রাজ্যের উন্নতির জন্য অবশ্য কর্তব্য।   রাজা যেন কেবলি স্বার্থপরের ন্যায় তাঁর উপকারে লাগে এমন ব্যাক্তির সংসারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের দ্বারা ভীত, ক্ষীণবল মানুষজনের পাশে থাকাটাও তাঁর অবশ্য কর্তব্য। রাজকোষাগারের অর্থ কি রাজার ইচ্ছায় নয়ছয় হয়? শিল্পীমহল, বণিক সম্প্রদায় ও ঠিকাদারগণই কি  রাজতোষণ করে সমস্ত অর্থের সিংহভাগ লুটেপুটে নেন? হে রাজন্‌! আপনি কি তার হিসাব রাখেন? বৃদ্ধ, দরিদ্র, কৃষক, আশ্রিত, অনাথ ব্যাক্তিবর্গ কি সেই অর্থের ছিটেফোঁটাও ভোগ করেন না? রাজ্য মধ্যে মধ্যে নগর উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে বড় বড় পুষ্করিণী খনন হয়েছে কি? কৃষিকার্য মৌসুমীবায়ু নিরপেক্ষ হয়ে  সম্পন্ন হয়েছে কি? পৌরবর্গ ও জনপদবাসীর সঙ্গে আপনার বিরোধ নেই তো? আমি যতদূর জানি, রাজা নাস্তিকতা, অমৃতপান, নিদ্রা, কলহ, ক্রোধ , নিরন্তর অর্থচিন্তা, দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি চৌদ্দটি রাজদোষ বর্জন করে রাজ্যাভিষেকের কালে শপথ নিয়ে সিংহাসনে বসেছিলেন। কিন্তু তা কি তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন? 
যুদ্ধিষ্ঠির এতক্ষণ একটুও অস্থির না হয়ে শুনছিলেন দেবর্ষি নারদের প্রশ্নগুলি। নারদ থামলে তিনি বললেন, হে দেবর্ষি! আপনি এতক্ষণ যে ধর্মনিচয় প্রশ্নগুলি আমার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন তা অত্যন্ত ন্যায়সম্মত। আমি সাধ্যানুযায়ী আমার রাজ্যের কল্যাণে যতটা পারি পালন করে থাকি।    কিন্তু তবুও কিছু কিছু সত্কার্যের মধ্যে অঘটনস্বরূপ  সামান্য দোষ হয়েও যায়। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। দেবর্ষি নারদ যারপরনেই খুশি হয়ে রাজা যুধিষ্ঠিরকে  বললেন, এযাবতকাল বহু স্থান পর্যটন করতে  গিয়ে বহু  রাজন্যবর্গের সহিত সাক্ষাত ও তাঁদের অনিন্দ্যসুন্দর  রাজসভা  পরিদর্শণ হয়েছে। কিন্তু আপনার মত রাজা আমি দেখিনি। আপনি সত্যি‌ই ধর্মরাজ।

অথ মহাভারত (সভাপর্ব) সমাপ্ত।

"বেশ হালকাভাবে নিলেন তো ব্যাপারটা! সত্যি আপনার ন্যায় স্থীতধী রাজা বিরল" নারদ ভাবলেন।
পাশ থেকে এক যেন ফিসফিস করে বলে উঠল,
" জানোনা তো? রাজ্যপাট চালাতে গেলে প্রচুর বুদ্ধির প্রয়োজন। মহারাজ যুধিষ্ঠির খুব ভালোভাবেই জানেন এসব রাজনৈতিক কূটকাচালী কি করে হ্যান্ডেল করতে হয়। কথায় কথা বাড়ে। কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তসাপ বেরিয়ে আসতে পারে! অতএব মৌনতাই সদ্‌বুদ্ধির লক্ষণ"

Thursday, April 21, 2016

স্বর্গীয় রমণীয় ( ৮)

 ব্রহ্মার বিষ্ণুভক্ত ছেলেটি ছিল আমাদের সমাজের গেজেটের মত। পৃথিবীর কোণা কোণা থেকে খবর সংগ্রহ করে, "নারায়ণ, নারায়ণ" বলে সরল স্বরে যত্রতত্র হাজির হত। আর সেই ঘটনায় আরো রং চড়িয়ে খবরকে আরো মশলাদার করে  সে এমনভাবে পরিবেশন করত যে ঝগড়া বাধতে বাধ্য।সে না থাকলে পৃথিবীতে সাংবাদিক শব্দটির বুঝি উদ্ভব হতনা। এই সুদর্শণ ছেলেটির নাম নারদ।আর নারদ‌ই সম্ভবতঃ তিনভুবনের আদিমতম সাংবাদিক। সে ছিল তুখোড় গল্প বলিয়ে। 

সে যাইহোক আমাদের দেশে এই ছেলেটি কালেকালে তার  শৈশব, কৈশোর, যৌবন গুলে খেয়ে নারদমুনি নামে যুগযুগ ধরে বাস করছেন। তবে বৃদ্ধ হলে কি হয় তার স্বভাব যায়না । লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিতে তার জুড়ি এখনো আর কেউ নেই।তাই বলে এই ঝানু সাংবাদিকটির বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায়নি।  সমাজের ভালোর জন্যে যা করণীয় তার জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করতেও তিনি প্রস্তুত। তাঁর অনেক গুণ। নিজের রচনায় গান লিখে সুর করে তিনি অহোরাত্র গেয়ে বেড়ান। 

বহুকাল আগে নারদের একটি ঢেঁকি ছিল। সেটিতে চড়ে তিনি ঝাঁ করে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে, মর্ত্য থেকে পাতালে চলে যেতেন।  এখন বয়সের ভারে কুব্জ ও ন্যুব্জ পন্ডিত প্রবর মহামুণি সঙ্গীতরত্নটি শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই বৈদ্যুতিন মাধ্যম কাঁপিয়ে বেড়ান।  তাঁর অস্তিত্ব এখন অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে প্রকট ডিজিটাল মাধ্যমে।

তাঁর মত ধড়িবাজ জার্নালিষ্ট যে কলমটিতে নোট লিখে রাখেন তাতে স্পেশ্যাল একফোঁটা ক্যামেরা লাগানো। তিনি যখন মন্ত্রীবর্গের সভাসমিতিতে চুপিচুপি সূক্ষ্মশরীরে প্রবেশ করেন সেখানকার বন্ধদুয়ার বৈঠকের  আলাপ-আলোচনা থেকে ক্রিয়াকলাপ  পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে  স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রেকর্ডিং হয়ে ইউটিউবে আপলোড হয়ে যায়। তিনি এখন কিছুটা বয়সের কারণে মিতবাক্‌। তবে কলম ও ক্যামেরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে অহোরাত্র চলে এবং চলতেই থাকে। সময়ের দলিল অনুযায়ী সবকিছু ডেটা স্টোর হয়ে যায় তাঁর ক্লাউড ড্রাইভে ।কার্যকালে  তিনি একটি মাউসের ক্লিকেই সেই ডেটাকে ঘাড় ধরে নামিয়ে আনেন পৃথিবীতে। কারণ তিনি যে কলহপ্রিয় নারদ। ঝগড়া উসকে দিয়ে গোল বাধাতে তাঁর জুড়ি এখনো কেউ জন্মায়নি ।  তবে গোল বাধিয়ে নিজের আত্মতুষ্টির একটাই কারণ। নিজের রাজধর্মকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই ট্র্যাডিশান এখনো চলছে.....  

Tuesday, April 12, 2016

স্বর্গীয় রমণীয় (৬)

অশোক-বাসন্তীষষ্ঠী ও নীলষষ্ঠী together এবছর !!

শোকষষ্ঠী বা বাসন্তীদুর্গাপুজো হয় চৈত্রমাসের শুক্লাতিথিতে। মহাদেবের নীলের পুজোর দিনটা বরাদ্দ চড়ক বা গাজনের দিনক্ষণ অনুযায়ী, বর্ষশেষের সংক্রান্তির আগের দিনে। প্রতিবছর এই নিয়ে দুগ্গার সঙ্গে শিবের বেশ ঠান্ডা লড়াই চলে। তা এবার সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে বাসন্তী-অশোকষষ্ঠী আর নীল একদিনে পড়েছে। শিবের ফন্দী আর কি দুগ্গার জানা নেই? দুগ্গা একটু বাপেরবাড়ি আসতে চান নিরিবিলিতে কিন্তু এবার সেই গাঁটছড়া বেঁধে নেশাখোরটা সঙ্গী হল।
আসার পথে দুগ্গা বলেছিল একবার, এবার ভোটের হাওয়া গরম, বোশেখ না পড়তেই হাওয়াবাতাস গরম। তুমি চুল-দাড়ি-জটা-গোঁফ কেটে চলো। শিব বলল, আমি মেয়েছেলের কথায় কান দি‌ই না।
দুগ্গা বলল, ক'দিন আগেই তো ঠান্ডায় ঠান্ডায় শিবরাত্তিরে মহা ধূমধাম করে কত্ত পুজো পেলে । ফাগুনদিনের মাগ্যির বেলের পানা, তরমুজ, ফুটি খেয়ে পথ্যি করলে। সিদ্ধি-মধু-ঘিয়ের ফেসপ্যাক নিলে । ডাবের জলে মুখ আঁচালে । ঠান্ডার পর নতুন গরমে টক দৈয়ের ঘোল খেয়ে ব্যোম্‌ ব্যোম্‌ করে ত্রিভুবন শান্তি কল্লে । মাথা ঠান্ডা তো তোমার গুরু! আবার নীলষষ্ঠী ? ষষ্ঠী তো এতদিন জানতাম একবগ্গা মেয়েদের সম্পত্তি। এবার সেখানেও ভাগ বসালে তো আমাদের ব্র্যান্ড ডাইলুশান হয়।
শিব বলল, নিজের আত্মতুষ্টিতে বিভোর তুমি। জানবে কি করে প্রজারঞ্জনের মাহাত্ম্য?
আবার ষষ্ঠীর পেছনে নীল জোড়া কেন বাপু? ক‌ই আমরা তো লাল,সবুজ, হলুদ ষষ্ঠীর দোহাই দি‌ই না মানুষকে।
পাশ থেকে সাওকড়ি মেরে নন্দী বলল, মা ঠাকরুণ তো ঠিক‌ই বলেচে বাবা।
নীলষষ্ঠী নীল কেন ? লাল বা সবুজ নয় কেন?
নীল কথাটি নীলকন্ঠ মহাদেবের সাথে সাযুজ্য রেখে... এতদিন আমার কাছে আচিস এটাও জানিস নে? মহাবাবা বলেন । সেই যে সেই সমুদ্রমন্থনের সময় আমি দুনিয়ার সব বিষ আমার কন্ঠে ধারণ করেছিলাম । তাই তো সকলে আমাকে নীলকন্ঠ বলে ডাকে রে ।
তার সঙ্গে ষষ্ঠী জুড়লো কে বাবা ? নন্দী বললে
তাহলে শোন্‌ বলি:
এক বামুন আর বামনীর পাঁচছেলে আর দুটি মেয়ে । ( ফ্যামিলি প্ল্যানিং তো আর ছিলনা সে সময়ে )
তারা খুব পুজোআচ্চা করত । কিন্তু এত পুজো, বারব্রত করেও তাদের সব ছেলেমেয়েগুলো একে একে মরে গেল । তখন বামনীর ঠাকুরদেবতায় বিশ্বাস চলে গেল । তাদের আর সেই জায়গায় থাকতেও ভালো লাগল না । বামুন-বামনী ঠিক করল সব ছেড়েছুড়ে তারা মনের দুঃখে কাশীবাসী হল । দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করে অন্নপূর্ণার পুজো করে মণিকর্ণিকার ঘাটে বসে আছে , এমন সময় মা-ষষ্ঠী বুড়ি এক বামনীর বেশে এসে বললে " কি ভাবছ গো মা?" বামনী বললে " আমার সব ছেলেমেয়েদের হারিয়েছি । এত পুজোআচ্চা সব বিফলে গেল আমাদের । সব অদৃষ্ট। ঠাকুর দেবতা বলে কিছ্ছু নেই । "
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন " বারব্রত নিষ্ফল হয়না মা, ধর্মকর্ম যাই কর ঈশ্বরে বিশ্বাস চাই । তুমি মা-ষষ্ঠীকে মানো? তাঁর পুজো করেছ কখনো? তিনি সন্তানদের পালন করেন । বামনী বললে " আমি এযাবতকাল সব ষষ্ঠী করে আসছি কিন্তু তবুও আমার ছেলেরা র‌ইল না ।
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন্" তুমি নীলষষ্ঠীর পুজো করেছ কখনো? চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে শিবের পুজো করবে । শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে জল খাবে । সন্তান্‌দের মঙ্গলকামনা করবে" (স্পিরিচ্যুয়াল গুরুদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের একটা লিমিট থাকে, তখন ছিলনা)
বামনী সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পুনরায় মাতৃত্ব লাভ করলে ।

নন্দী সব শুনে বললে" বাবা, এ তো তবে তোমার নিজের ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করলে তুমি । আর সবষষ্ঠীর পুজোয়তো মাষষ্ঠীর পাল্লা ভারী হয়ে যাচ্ছিল তাতে যদি তোমার নামডাকে ভাটা পড়ে তাই বুঝি এমনটি কল্লে তুমি?"মহাবাবা বললেন " দেখ নন্দী, এখন যা যুগ এয়েচে তাতে নিজের ব্র্যান্ড যে মূল্যেই হোক ক্রিয়েট করতে হবে । নয়ত তুই স্থান পাবিনা জগতে , যা কম্পিটিটিভ মার্কেট এয়েচে! লাখলাখ দেবদেবীর ভিড়ে মহাদেবকে কেউ আর মানবেনা ।
আর এবার সেজন্যেই একসঙ্গে এসেচি আমরা। বাসন্তী-অশোক ষষ্ঠীও থাক। নীলষষ্ঠীও থাক। মানুষ জানুক রসায়নের জারণ-বিজারণের মত, পদার্থবিদ্যার স্থিতি-গতির মত শিব-দুগ্গার স্মরণ-মনন যুগপত ঘটে।