গঙ্গা
ছিল সেক্সবম্ব । সগ্গের সব
দেবতারা হেডটারনার এই মেয়ের
প্রেমে এক্কেরে ফিদা। সক্কলেই
সে সময় ছুটেছিল গঙ্গাকে পাবার
আশায়, একটু
যদি তাকে ছুঁতে পারে অথবা
একটু ফস্টিনষ্টি করতে পারে।
মানে বেশী কিছু নয় দেবতারা
নিজেদের দেবীদের ফাঁকি দিয়ে
এক্সট্রা ভার্জিন মেয়ের সাথে
পরকীয়া...এই
আর কি। কিন্তু গঙ্গা নাছোড়
কন্যে। সেক্সি হলেই কি সস্তা
নাকি? অতএব
মুখ বেঁকিয়ে সে চলে যেত
কম্বুকন্ঠীর মত গ্রীবা হেলিয়ে।
সগ্গে বসে বসে এট্টু মেয়েবাজি
না করে সারাদিন যুদ্ধ আর অসুর
ঠ্যাঙাতে কি ভাল্লাগে?
তাই
সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁকানি।
ঐ মানে একটু ডাইভারশান। আর
কিছুতো নেই সে মুলুকে। ইনটারনেট,
কেবল,
সেলফোন,
ল্যাপটপ,
এফ এম
রেডিও। বরফের রাজ্যে সারাদিন
যেন সফেদ সমাধিতে বসে থাকা
আর গোঁফে তা দেওয়া,
দাড়ি
চুলকোনো আর জটার উকুনবাছা ।
এদিকে তেমনি এক সগ্গরাজ্যে
বড় হচ্ছিল গঙ্গা। যেমন তার
রূপ তেমনি তার চলন। যেমন তার
লাবণ্য তেমনি সে গম্ভীর। ভাঙে
তবু মচকায়না।
তুখোড়
সব দেবতারা নাকানিচোবানি।
তারে ধরি ধরি মনে করি,
ধরতে
গিয়ে আর পেলেম না টাইপ অবস্থা
সকলের। এদিকে অযোধ্যার রাজা
সগর তখন ভাবছেন অশ্বমেধ যজ্ঞটজ্ঞ
করে সগ্গের দেবরাজ হবেন।
প্রথামত
একটি অশ্বকে মন্ত্রপূত করে
ইচ্ছাভ্রমণে ছেড়ে দিলেন । সে
বচ্ছরান্তে ঘুরে ফিরলে অনুষ্ঠান,
যাগযজ্ঞ
ইত্যাদি হবে। সগর তাঁর ষাটহাজার
পুত্রকে নিয়োগ করলেন অশ্বটির
রক্ষকরূপে।
এদিকে
দেবরাজ ইন্দ্রের মহাচিন্তা
হল। তিনি ভাবলেন যদি এই অশ্বমেধ
যজ্ঞের সফলতার কারণে সগরের
মনস্কামনা পূর্ণ হয় তবে উনি
স্বর্গ্যরাজ্য হারাতেও পারেন
। তাই রাতারাতি অশ্বটিকে সবার
অলখ্যে পাতালে সরিয়ে দিয়ে
ঘোড়াচোরের আখ্যা পেলেন । পাতাল
প্রদেশে সমুদ্রতটে আশ্রমে
ধ্যানমগ্ন কপিলমুণির কাছাকাছি
অশ্বটিকে বেঁধে রাখলেন ইন্দ্র।
সেযুগে
স্বর্গ বলা হত উত্তরের উচ্চতর
হিমালয়কে। মর্ত্য হল সমগ্র
সমতট ভূমি আর্যাবর্ত আর পাতাল
হল সমগ্র দক্ষিণের নিম্নভূমি
। জল-জঙ্গলে
পরিপূর্ণ,
শ্বাপদসঙ্কুল,
খাল-ডোবা-নালা
আর সাপখোপের আখড়া এই দুর্গম
পাতালরাজ্যটি ছিল সাধারণের
অগম্য স্থান। স্বর্গ,
মর্ত্যের
সর্বত্র অশ্বটিকে খুঁজে না
পেয়ে সগররাজার ষাটহাজার পুত্র
পাতালে অনুসন্ধান কার্য চালাল।
এক মুণির কুটিরের সমুখে অশ্বটিকে
বাঁধা দেখতে পেয়ে তারা ভাবল
এই মুণিই বুঝি অশ্বচোর। তাদের
প্রশ্নে,
কোলাহলে
ধ্যানম্গ্ন কপিলমুণি ক্রোধের
বশে সগরের ষাটহাজার পুত্র
ভস্মীভূত হল ।
এবার
যজ্ঞের ঘোড়া ফিরে না আসায়
সগরের খোঁজ শুরু। ভাইয়ের
পুত্র অংশুমানকে পাঠালেন
সন্ধান করতে। অংশুমান ঘুরতে
ঘুরতে কপিলের আশ্রমে দেখলেন
যজ্ঞের ঘোড়াটিকে। কপিল জানালেন
অংশুমানের ষাটহাজার পিতৃব্যের
ভস্মীভূত হবার কথা। তাকে
ঘোড়াটি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার
কথা বললেন। কিন্তু অংশুমান
সেই ষাটহাজার পিতৃব্যের
পারলৌকিক ক্রিয়া-তর্পণ
কোথায় সারবেন?
সাধারণ
জলে তো তাদের মুক্তি অসম্ভব।
অংশুমান ফিরে এলেন সগর রাজার
কাছে। অশ্ব ফিরে আসায় সগররাজা
অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন
কিন্তু পুত্রগণের আত্মার
কল্যাণে কোনো কাজ হলনা দেখে
মনের খুঁতখুঁতুনি থেকেই গেল।
স্বর্গ থেকে গঙ্গাধারাকে
নামিয়ে না আনলে কি করে তাঁর
পুত্রদের আত্মার মুক্তি সম্ভব?
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর
ততদিনে কেউ গঙ্গা নামের ঐ
সুন্দরী মেয়ের নাগাল পাওয়া
তো দূরের কথা,
চোখের
দেখা দেখেও ফ্যান্টাসাইজ
করতেও পারেনি।
কলকাঠি
নাড়লেন নাটের গুরু নারায়ণ।
গঙ্গা মাঈয়্যা কিছুতেই মর্ত্যে
অবতরণ করবেনা ?
স্বর্গসুখ
ছেড়ে নীচে নামতে সে নারাজ?
ব্রহ্মার
হাতে কমন্ডলু থাকত । শিবের
থাকত জটা। বিষ্ণু ভাবলেন এই
হবে আমার ইউএসপি। মায়ার খেলায়
তিনি ওস্তাদ।
সগর
রাজবংশের আরেক উত্তরসুরী
কোশলরাজ ভগীরথ নারায়ণের আদেশে
একহাজার বছর কঠোর তপস্যার পর
ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতে সমর্থ
হন । নারায়ণ কাজে লাগালেন
তাকে।
নারায়ণ
গেলেন ব্রহ্মার সামনে । যেই
না ব্রহ্মা হাতের কমন্ডলুর
জল নারায়ণের পাদপদ্মে ঢালা
অমনি নারায়ণের পা ধোয়া জল
গড়িয়ে পড়ল সহস্রধারা রূপে।
নারায়ণ বললেন,
ভগীরথ
এই হল তোমার গঙ্গাধারা। হাতের
শাঁখটি ভগীরথের হাতে দিয়ে
বললেন, এই
হল প্রকৃষ্ট সময়। গঙ্গাকে
এবার ভুলিয়ে ভালিয়ে মর্ত্যে
নিয়ে চলো। তুমি শাঁখ বাজাতে
বাজাতে আগে চলো আর পেছনে চলুক
এই জলধারা।
উদ্ভিনযৌবনা
গঙ্গার সিডাকশন মেকানিজমটা
একটু ভিন্নস্বাদের। সামনে
তার মধ্যবয়সী,
সংসারে
চেটে যাওয়া মাঝবয়সী হ্যান্ডসাম
। সেও বলে আমিও খেলাব তাদের।
স্বর্গের সুখ যখন ছেড়েইছি
তখন তোমাদেরো কালঘাম ছোটাবো।
ভগীরথ
চললেন । পেছনে রূপসী গঙ্গা
। কিন্তু নাছোড় গঙ্গা একবার
লুকোয় গুহার মধ্যে তো আরেকবার
ঢুকে পড়ে গিরিকন্দরে । আবার
খলখল করে বয়ে চলে তো আবার নানা
অছিলায় হারিয়ে যায় ভগীরথের
চোখের সামনে থেকে। পাহাড়ীপথ
ভগীরথের শঙ্খধ্বনিতে মুখর
হয়। কিন্তু সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ
থেকে কি করে সে লাফিয়ে পড়বে
? বেগবতী
স্রোতস্বিনীর আছড়ে পড়া কি আর
ধরিত্রী সইতে পারবে?
রসাতল
হবে সেই চিন্তায় ব্রহ্মা
ভগীরথকে শিবের শরণ নিতে বললেন।
শিব মাথা পেতে দাঁড়িয়ে নিজের
জটায় ধারণ করলেন গঙ্গাকে।
পাহাড়ের মাথা থেকে লাফিয়ে
পড়লেন গঙ্গা। শিবের জটাজাল
ছিন্নভিন্ন করে স্বর্গ প্রবাহিনী
গঙ্গার ধারা মর্ত্যে প্রবাহিত
হল ।
এইভাবে
অসংখ্য বাধা-বিপত্তি
সামলিয়ে অবশেষে ভগীরথের
দেখানো পথ ধরে গঙ্গা হল
দক্ষিণমুখী। সবশেষে ভগীরথের
শঙ্খধ্বনি অণুসরণ করতে করতে
গঙ্গা গিয়ে সোজা হাজির কপিলমুনির
আশ্রমের দিকে। আর বঙ্গের মধ্যে
গঙ্গার এই দক্ষিণমুখী শেষ
ধারাটির নাম হল ভাগিরথী ।
সাগরদ্বীপে গঙ্গার জলের
স্পর্শে সগরমুণির ষাটহাজার
পুত্রের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
সম্পন্ন হলে শান্তি পেল তাদের
পারলৌকিক আত্মা। উদ্ধার হয়ে
স্বর্গে পাড়ি দিল তারা।
মেয়ের
কাজ শেষ। লীলায়িত ছন্দে গঙ্গা
ঝাঁপ দিলেন সমুদ্রে। গঙ্গার
সাথে সাগরের মিলন হল আর এই
স্থান বিখ্যাত হল সাগরসঙ্গম
বা গঙ্গাসাগর নামে।
কিন্তু
ফাইনালি ভগীরথ-ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরকে
ডিচ মেরে গঙ্গা তার দয়িতের
সাথে মিলিত হল। সেটাই এ গল্পের
ট্র্যাজেডি।