জামা-e-ষষ্ঠী
জামাইষষ্ঠীর
আরেক নাম অরণ্য ষষ্ঠী। কি এবং
কেন অনুধাবন করতে গিয়ে জানতে
পারলাম বাংলার এই ব্রতের কারণ।
এক বুড়ির একপাল ছেলের মধ্যে
(ভাগ্যিস!
ফ্যামিলি
প্ল্যানিং ছিলনা)
ছোটবৌটির
খুব মিথ্যে বলার অভ্যাস। নিজে
চুরি করে খায় আর রোজ রোজ একটি
পোষা কালোবিড়ালির নামে দোষ
দেয়। কালোবিড়ালি মা'ষষ্ঠীর
বাহন। সে গিয়ে নালিশ করলে মা
ষষ্ঠী ছোটবৌ'কে
শাস্তি দেবার কথা ভাবেন। ছোটবৌ
ফুটফুটে পুত্র সন্তান প্রসব
করে আর কালোবিড়ালি সেই সন্তান
মুখে করে নিয়ে রেখে আসে বনে
জঙ্গলে। এইভাবে একে একে ছোটবৌ
গোটা সাতবার গর্ভ ধারণ করে
পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় আর
সব কটি পুত্র কালোবিড়ালির
খপ্পরে পড়ে । এবার ছোটবৌ কন্যা
সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু
সেই প্রসবটি হল সকলের অলক্ষ্যে,
জঙ্গলের
মধ্যে। কিন্তু তবুও কালোবিড়ালির
চোখ এড়ালোনা। মানে যাকে বলে
বুলি করা। সে যথারীতি মুখে
করে রেখে এল কন্যাশিশুটিকে।
তখন ছোটবৌ আর না পেরে মা ষষ্ঠীকে
ডাকতে লাগল। তিনি এদিকে আগের
সেই সাতটি পুত্র ও আর এক কন্যাকে
লালন করতে শুরু করেছেন। ছোটবৌকে
শিক্ষা দেবার জন্য তাকে বললেন"
তুমি
অন্যের নামে মিথ্যে অপবাদ
দিয়েছিলে বলে ঐ কালোবিড়ালি
রাগ করে তোমার সবকটি সন্তানকে
আমার কাছে রেখে গেছে। তুমি
তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাও তবে
সকলকে ফিরে পাবে"
ছোটবৌ
কালোবিড়ালিকে আদর করে ডেকে
এনে তাকে মাছ-দুধ
খাইয়ে তুষ্ট করলে আর ক্ষমা
চেয়ে বললে তার সন্তানদের
ফিরিয়ে দিতে। কালোবিড়ালি
বললে"
জৈষ্ঠ্যমাসের
শুক্লপক্ষে ষষ্ঠীর পুজো করো।
তোমার সন্তানরা সকলে সুস্থ
থাকবে আর মা ষষ্ঠী সকলকে ফিরিয়ে
দেবেন।"
মনোবৈজ্ঞানিক
দাওয়াই দিতে সিদ্ধহস্ত
ষষ্ঠীবুড়ি। অন্য দেবদেবীর
ভীড়ে নিজের ব্র্যান্ডটা যাতে
ডাইলুট না হয়ে যায় !
আর
কালোবিড়ালি হল মা ষষ্ঠীর
এজেন্ট।
তদ্দিনে
টাইম ট্র্যাভেলের কৃপায়
ছোটবৌয়ের সাতছেলে-সাতবৌ
আর কন্যা সহ একটি জামাই নিয়ে
ভরভরন্ত সংসার। মা ষষ্ঠীর
অরণ্যের ঘেরাটোপে ছেলেপুলে
গুলি বেঁচেবর্তে ছিল বলে
অরণ্যষষ্ঠী নাম এর। আর
ছেলে-বৌ-মেয়ে-জামাই
সকলের মঙ্গল কামনা করেই এই
ষষ্ঠী। এবার আসি মূল ব্রতের
নীতিকথায়......
১)
বৌ-রাই
কি আদি অনন্তকাল ধরে মিথ্যে
কথা বলে???
২)
তখনকার
দিনে বৌদের কম কম খেতে দেওয়া
হত বলে সে রান্নাঘর থেকে খাবার
চুরি করে খেত,
তার জন্যে
তাকে বারবার গর্ভাধানের মাশুল
দিয়ে শেষে ক্ষমা চাইতে হবে?
৩)
সাত-সাতটি
পুত্র সন্তান হাপিশ হবার পরেও
বৌয়ের টনক নড়লনা?
শেষে
মেয়েটা হারাণোর পর ছোটবৌ মা
ষষ্ঠীর কাছে আর্জি জানালো?
অতএব
সেখানেই কন্যাসন্তানের জয়!
আর ছেলে-বৌ
দের সাথে মেয়ে-জামাইয়ের
জন্য ফল-বাটা
ইত্যাদি দেবার প্রচলন আছে এই
ষষ্ঠীতে
তাই
আজকের দিনে কুদোস টু ষষ্ঠীবুড়ি!
জয়
অরণ্যষষ্ঠীর জয়!
জয়
জামাইষষ্ঠীর জয়!
জয় বৌষষ্ঠীর
জয়!
সেই
থেকে শহর জুড়ে জামাইষষ্ঠী
পালন শুরু। তবে এখন ইলেকট্রনিক
জামা-e-ষষ্ঠীর
যুগ এয়েচে। নেই সে জামাই,
নেই সে
অরণ্য।
জামাইবুড়ো
ষষ্ঠী খেতে চাইলেই তো হবেনা।
সেই শুনে বুড়ো শ্বশুরের
কষ্টিপাথর টাকের্ ওপর বিন্দু
বিন্দু ঘাম। ছাতা মাথায়,
যষ্টি
হাতে জ্যৈষ্ঠের অসহ্য গরমে
শ্বশুর আম-লিচু-কালোজাম
খোঁজেন আর মনে মনে জামাই
বাবাজীবনের গুষ্টির তুষ্টি
করেন। বাড়ি ফিরে গিন্নীকে
বলেন, এবছরেই
লাষ্ট ষষ্ঠী কিন্তু,
এই বলে
দিলুম। বাটা দেবেন গিন্নী!একটা
না দুটো না পাঁচটা ফল চাই।
আবার গিন্নীর অনুরোধ একটা
একফুট লম্বা কাঁঠাল চাই।
শুধু তো আর ফল কিনলে হবেনা।
ফলের সাথে চাই পল অর্থাত মাংস।
পলের পরেই পোলাও। চাই বাসমতী
চাল। মনে মনে কর্তা বলেন,
পরের
ছেলের জন্যে দরদ উথলে উঠচে।
নিজেরা কোনোদিন বাসমতী খেলামনা।
গিন্নী সেই শুনে বললেন,
ভালোই
তো, কথাতেই
তো আছে, জামাইয়ের
জন্যে মারি হাঁস। গুষ্টিশুদ্ধ
খায় মাস। আমি না হয় "জামাইয়ের
জন্যে রাঁধব বাসমতী,
গুষ্টিশুদ্ধ
খেয়ে করবে ফূর্তি"
পলের
সাথে চাই জল অর্থাত ঠান্ডা
নরম পানীয়। জলের পরেই পান।
ওদিকে
জামাই ভাবে গুষ্টিশুদ্ধ
শালাশালীর জন্যে । খুব চিন্তা
হয়। একটা দিনে পকেট খালি হবার
যোগাড়। এমনি হয়ে আসছে বিয়ের
পরের বছর থেকেই।
এবছর
জামাই হঠাত করে ট্রান্সফার
হয়ে গেল বিদেশে। খুব খুশি
শ্বশুর।
জামাইষষ্ঠীর
আগের রাতে এপারে গুষ্টিশুদ্ধ
শালাশালী আর শ্বশ্রুমাতা আর
ওপারে জামাই একা তুষ্টি খুঁজে
জামাইষষ্ঠীর। মাঝে একরাশ
ডিজিটাল ঢেউ। স্কাইপ কল অন।
সৃষ্টিছাড়া
জামাইবুড়ো তুষ্টি খোঁজে
নেটে, মিষ্টি
হেসে শ্বশ্রূমাতা ওয়েবক্যামে
সেঁটে ।
জামাই
বলে মিস করছি খুব।
শ্বশ্রূমাতা
পষ্টাপষ্টি মেসেজ দিয়ে খালাস,
আগুণ
বাজার e-ষষ্ঠী,
বাতিল
তত্ত্ব-তালাস
।
শালাশালির
সাথে ফষ্টিনষ্টি হয়। জামাইবাবুর
খরচা বাঁচে । ভুঁড়িটা আনন্দে
ফুলে উঠে জয়ঢাক ।
গুষ্টি
শুদ্ধ অনলাইনে চটরপটর চ্যাট,
জামা-e-ষষ্ঠী
তর্ক বৃষ্টি বকর বকম্ ভাট
।
হঠাত
বলে জামাইশালা,
শুকনো
হাসি জামাই-বিদেয়
মানছিনা, মানব
না, বের
করুন ক্রেডিট কার্ড,
খুলে
ফেলুন খাপ। নম্বরটা দিন আমারে,
পাঞ্চ
করব আমি,
পাসওয়ার্ডো
দেবেন সাথে। শালী-শালা,
শ্বশুর
শাশুড়ি সব মুখ চাওয়াচাউয়ি
করে।
ইচ্ছেমত
ষষ্ঠীবাজার করে নেব নেটে..
বেশী
কিছু নয় !
ঘড়ি,
জামা,
জুতো,
খাবার
সবি ঘেঁটে পাবো
দরকার
মত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও
পাবো।
প্রয়োজনে
অনলাইনে খাবারো অর্ডার দেব।
খেয়েদেয়ে
বুক-মাই-শো
মুভি টিকিট নেব।
উবের-ওলা
ক্যাব ডেকে মাঞ্জা দিয়ে যাব।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ শ্রীমতী শনিবার
উত্তরবঙ্গ সংবাদ শ্রীমতী শনিবার
No comments:
Post a Comment