Thursday, April 21, 2016

স্বর্গীয় রমণীয় ( ৮)

 ব্রহ্মার বিষ্ণুভক্ত ছেলেটি ছিল আমাদের সমাজের গেজেটের মত। পৃথিবীর কোণা কোণা থেকে খবর সংগ্রহ করে, "নারায়ণ, নারায়ণ" বলে সরল স্বরে যত্রতত্র হাজির হত। আর সেই ঘটনায় আরো রং চড়িয়ে খবরকে আরো মশলাদার করে  সে এমনভাবে পরিবেশন করত যে ঝগড়া বাধতে বাধ্য।সে না থাকলে পৃথিবীতে সাংবাদিক শব্দটির বুঝি উদ্ভব হতনা। এই সুদর্শণ ছেলেটির নাম নারদ।আর নারদ‌ই সম্ভবতঃ তিনভুবনের আদিমতম সাংবাদিক। সে ছিল তুখোড় গল্প বলিয়ে। 

সে যাইহোক আমাদের দেশে এই ছেলেটি কালেকালে তার  শৈশব, কৈশোর, যৌবন গুলে খেয়ে নারদমুনি নামে যুগযুগ ধরে বাস করছেন। তবে বৃদ্ধ হলে কি হয় তার স্বভাব যায়না । লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিতে তার জুড়ি এখনো আর কেউ নেই।তাই বলে এই ঝানু সাংবাদিকটির বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায়নি।  সমাজের ভালোর জন্যে যা করণীয় তার জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করতেও তিনি প্রস্তুত। তাঁর অনেক গুণ। নিজের রচনায় গান লিখে সুর করে তিনি অহোরাত্র গেয়ে বেড়ান। 

বহুকাল আগে নারদের একটি ঢেঁকি ছিল। সেটিতে চড়ে তিনি ঝাঁ করে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে, মর্ত্য থেকে পাতালে চলে যেতেন।  এখন বয়সের ভারে কুব্জ ও ন্যুব্জ পন্ডিত প্রবর মহামুণি সঙ্গীতরত্নটি শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই বৈদ্যুতিন মাধ্যম কাঁপিয়ে বেড়ান।  তাঁর অস্তিত্ব এখন অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে প্রকট ডিজিটাল মাধ্যমে।

তাঁর মত ধড়িবাজ জার্নালিষ্ট যে কলমটিতে নোট লিখে রাখেন তাতে স্পেশ্যাল একফোঁটা ক্যামেরা লাগানো। তিনি যখন মন্ত্রীবর্গের সভাসমিতিতে চুপিচুপি সূক্ষ্মশরীরে প্রবেশ করেন সেখানকার বন্ধদুয়ার বৈঠকের  আলাপ-আলোচনা থেকে ক্রিয়াকলাপ  পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে  স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রেকর্ডিং হয়ে ইউটিউবে আপলোড হয়ে যায়। তিনি এখন কিছুটা বয়সের কারণে মিতবাক্‌। তবে কলম ও ক্যামেরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে অহোরাত্র চলে এবং চলতেই থাকে। সময়ের দলিল অনুযায়ী সবকিছু ডেটা স্টোর হয়ে যায় তাঁর ক্লাউড ড্রাইভে ।কার্যকালে  তিনি একটি মাউসের ক্লিকেই সেই ডেটাকে ঘাড় ধরে নামিয়ে আনেন পৃথিবীতে। কারণ তিনি যে কলহপ্রিয় নারদ। ঝগড়া উসকে দিয়ে গোল বাধাতে তাঁর জুড়ি এখনো কেউ জন্মায়নি ।  তবে গোল বাধিয়ে নিজের আত্মতুষ্টির একটাই কারণ। নিজের রাজধর্মকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই ট্র্যাডিশান এখনো চলছে.....  

No comments:

Post a Comment