বর্ষাকালে
বাঙালীর অনেক প্রেমের মধ্যে
"তাল
প্রেম'ও
উথলে ওঠে। এ তাল তালবাদ্যের
সাথে যুক্ত নয় কিন্তু
মাধ্যাকর্ষণের সূত্র মেনে
গাছে পেকে গেলেই তার মুক্তছন্দে
পতনের শব্দ যারা পেয়েছে তারা
আশাকরি বুঝবে যে তাল পড়ার সে
শব্দটা ঠিক কেমন। যাদের তাল
গাছ আছে তারা খুব হুঁশিয়ার
সে পতনের ব্যাপারে। কারণ
সাথেসাথে "ওরে
গিয়ে দ্যাখ টাইপ অবস্থা'
কারণ
তাল কুড়োতে হয় নয়ত তালরসে
বঞ্চিত হতে হয়। যারা এই তালের
গন্ধ সহ্য করতে পারেনা তাদের
অবস্থা খুব সঙ্গীন। যেন ইঁদুর
কিম্বা ছুঁচো মরেছে টাইপের।
তারা বলবে,
কি
এমন ফল একটা!
তোমরা
বাপু তিলকে তাল করতে ওস্তাদ।
আমজাম
বাকী ফল গেল রসাতলে,
ফাঁকতালে
মজতে পারো,
প্রেম
দেখাতে তালে!
আমি
বলি তালেগোলে হরিবোলে উতলধারায়
মিশিয়ে দাও তালরস ।
শ্রাবণ-ভাদ্রে
দেখা পাওয়া যায় এই তাল নামক
সুস্বাদু বর্ষাকালীন ফলটি।
যার রসে টইটুম্বুর অন্তর
পেরোতে হবে শ্বশ্রুগুম্ফ
সম্বলিত এক সত্ত্বাকে সামলিয়ে
। তালের বৈশিষ্ট্য এইটাই।
বাইরে গোবেচারা ভেতরে সন্ন্যাসী।
সেই জটাজুটসমাযুক্তকে বসন
শূন্য করতে যাওয়াটাই হল একটা
প্রজেক্ট। যত খোলো তত সুতো।
যেন চরকার সব সুতোর প্রলেপ
তার শরীরে। মনে মনে গেয়ে উঠি
"তারে
বহু বাসনায় স্ট্রিপ করে যাই,
তবুও
আঁটির নাগাল না পাই'
তাল
বাড়িতে এলে গৃহিণীর দু নয়নে
শাওনভাদো । অবস্থা কাঁদো কাঁদো
।
ঘষতি
ঘষতি অঙ্গ,
পুনঃ
তায় দিয়ে পানি,
কাজের
মাসী ভাবে বসে...
কখন
যে বাপু নিজের ঘরে তাল ছাঁকব
তা জানি ?
তালগাছ
বিবর্জিত শহরে রবিঠাকুর বেঁচে
থাকলে তালগাছ নিয়ে তাঁর কবিতার
আবেগ চাপা পড়ে যেত। অথবা ছেলের
সম্বন্ধ করতে গিয়ে ঠাকুমা
দিদিমারা বলতেন না "নামেই
তালপুকুর,
ঘটি
ডোবেনা'
।
এমন তালপুকুর দেখেই রবিঠাকুর
তালদীঘিতে বুঝি কেয়াপাতার
নৌকো ভাসানোর গান লিখেছিলেন।
প্রাচীনযুগের
মুনিঋষিরা লিখতেন তালপাতায়
খাগের কলম কালিতে ডুবিয়ে।
সকলের কাছেই তাঁদের সাহিত্যসৃষ্টির
হার্ডকপি ছিল এই ভূর্জ্যপত্র।
ভাদ্রমাসে
শুক্লা নবমী তিথিতে অনেক মহিলা
"তালনবমী'
ব্রত
করেন । নারায়ণকে নিবেদন করে
তবেই তাল খাওয়ার রীতি। এই
তালনবমীর ব্রতকথা যেন টেলিভিশনের
মেগা সিরিয়ালের মতই । শুধু
কুশীলব হলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ
আর তাঁর দুই প্রিয়তমা
সপত্নী...সত্যভামা
ও রুক্মিণী। তালের রসে স্বামীকে
বশীকরণ । ঐ আর পাঁচটা মতই এর
সুফল হল সৌভাগ্য লাভ,
সুখবৃদ্ধির
মতই। তবে এয়োস্ত্রীরাই কেবল
করতে পারবেন কেন তা নিয়ে আমার
যথেষ্ট সংশয়। জগত সংসারে কি
তবে যত দুঃখ এদেরি ?
বাকী
আইবুড়ো,
বিধবা
কিম্বা নিঃ সন্তান অথবা সিঙ্গল
মাদারদের কি সুখ,
সৌভাগ্যের
প্রয়োজন নেই?
শ্রীকৃষ্ণের
হ্যাপি বার্থডের পরদিন
নন্দোত্সবে ভক্তরা আনন্দে
নাচতে থাকে আর গেয়ে ওঠে..."তালের
বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল'
এ
যেন ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হয়ে
তাঁর প্রিয় ফলটি নিবেদনের
মধ্যে দিয়ে ভক্ত আর ভগবানের
মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা।
তাঁর জন্মদিন যেন আমাদের ঘরের
ছেলেরি জন্মদিন।
হে
কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু !
তালের
বড়া দিতে পারি,
যদি
পার কর এই ভবসিন্ধু।
হ্যাপি
বার্থডে অন্তর্যামী !
তালের
বড়া সাজিয়ে দিলাম,
এবার
খাবেন আমআদমী !
এই
তালের বড়াকে অনেকে তালের
ফুলুরিও বলেন। রসরাজ অমৃতলালের
লেখায় পাই এই তালফুলুরির কথা।
তালফুলুরির
তত্ত্বে করিয়া জমক,
ধার্য
হল লোক মাঝে লাগাবে চমক।
কথায়
বলে না ?
ও
তাল তুলনি বাপু!
যার
অর্থ হল তাল বাড়িতে এলে যা
হ্যাপা সামলাতে হয় তা যিনি
সামলান তিনিই জানেন।
এমনকি
রসরাজ বলছেন,
বেশী
তালের বিপদ।
ফুলুরি
খাইলে যদি পেটে ধরে ব্যথা,
পেপারমেন্টো
দিতে হবে নাহিক অন্যথা।
এর
থেকে বোঝা যায় বাঙালীর সেযুগে
তালবিলাসের কথা।
আমি
বাপু বড় তালকানা। তালকাহন
নিয়ে টালবাহানা না করে লিখে
দিলাম। আমি তেমন কোনও তালেবর
নই। যে কথা জানিনা আর শুনিনি
তা নিয়ে তিল থেকে তাল বানাতে
পারিনা তাই মাফ চেয়ে নিলাম
পাঠকের কাছে। আকাশ পাতাল ভেবে
তালের গন্ধে মাতাল হয়ে তাল
নিয়ে সাতকাহন লিখলাম। এবার
দাঁতাল কোনও পাঠক যদি নিন্দে
মন্দ করেন তাকে নাহয় রেঁধে
খাওয়াতে পারি এই তাল। আমার
হেঁশেলে আজ হরতাল। দিনেরাতে
সকলেই খাবে শুধু তাল।
যাই
দেখি আমার চাতালে তাল ছাঁকার
সুগন্ধে বুঝি হরিতাল পাখিটা
এয়েচে!
যদিও
বেতালে ডাকছে তবুও আমি তাল
দিয়ে চলি ওর সাথে।
তাল তাল করতাল।
ReplyDeleteOnline Bangla News Portal
ReplyDeleteThis is very nice post. Thanks for sharing with us.
ReplyDeleteLove
You may also visit my blog and leave your sweet comment.
Onlin Study Care 24
ENGLISH FOR TODAY | Class Eight
ENGLISH FOR TODAY | Classes Nine-Ten
ENGLISH FOR TODAY | Classes Eleven-Twelve
অনেক সুন্দর একটি রম্যরচনা পড়লাম। বেঁচে থাকুক আপনার এই বাংলা ব্লগ এটাই কামনা। আরও সুন্দর সুন্দর লেখা আমাদের উপহার দেবেন মন ভরে এমনটাই আশা করছি। ভালো থাকবেন সবসময়ই।
ReplyDelete