স্বর্গীয়
রমণীয় – কবিতা ক্লাব
(রম্যরচনা-নভেম্বর-২০১৫)
-বলি
হচ্ছেটা কি?
আমার বৌ
ফর্সা হবে না কালো হবে তা নিয়ে
কার এত মাথাব্যথা!
আমি যদি
স্বেচ্ছায় কালোমেয়েকে ঘরে
তুলি তাতে কার কি বলার আছে
বাপু! কালো
আর ধলো বাইরে কেবল,
ভেতরে
তো সব একই বাপু!
বলি আমার
সাথে ছিষ্টি করতে পারলেই তো
কেল্লাফতে !
তা নয়
সেই কালোমেয়েটা ঘরে আসা অবধি
কানের কানকো নাড়িয়ে দিল !
নন্দী,
এক ছিলিম
কড়া করে গাঁজা সেজে আনতো !
শিবুদা
বেশ ঝেঁঝে রয়েছেন। দুধেআলতা
পায়ে নতুন বৌটা ঘরে ঢোকেনি
তখনো তাই নিয়ে কৈলাসে কানাঘুষো
চলছে । কেষ্টদা তো মুখ ফসকে
বলেই ফেললেন,
"হোক
কলরবের"
তালিম
নিয়েছেন তালেবররা
ইন্দর
দাদাবাবু ঠিক এই সময়েই শিবুদার
মনোরঞ্জনের জন্য অপ্সরাকে
তাঁর কাছে পাঠালেন!
ক'দিন
আগে শিবুদার বলে,
না জানি
কি অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছেন
তাই ভেটস্বরূপ শিবুদাকে ঘুষ
হিসেবে স্বর্গের বার-ড্যান্সার
পাঠানো । যে যার কানেকশান
দেখায়। শিবুদা কালীকে বিয়ে
করে এনে ভাবে কতবড়ো নারীর ঘরণী
তিনি। ইন্দরদাদাবাবু অপ্সরাদের
পাঠিয়ে দেখাতে চান কত ক্ষেমতা
তার। মাঝখান থেকে কালীর
নাভিশ্বাস ওঠে ।
শিবুদার
আবার ইন্দর দাদাবাবু,
কেষ্টদার
মত মেয়েমানুষে ছোঁকছোকানি
নেই । তিনি বেশ ভয়ে ভয়ে অপ্সরাদের
বললেন, দেখো,
আমার ঘরে
নতুন বৌ এখন। তোমরা বরং তার
অতিথি হও ! এই
বলে কালীকে অপ্সরাদের সামনেই
আদরের সাথে ডাকলেন,
-হে
অঞ্জনসদৃশ শ্যামলী,
আমার
রূপসী কুচকুচে কালী,
ওগো বধূ
ব্ল্যাক-বিউটি
! কই
? এসো
একটিবার সামনে,
দ্যাখো
কারা এসেচেন তোমার সাথে আলাপ
করতে, তোমাকে
নাচগান শোনাতে!
ফর্সা
অপ্সরাদের সামনে এরূপ কুরুচিকর
সম্বোধনে কালী গেলেন ক্ষেপে।
একে নতুন বৌ,
তায় আবার
রাসভারী,
মেজাজী,
দাপুটে
এক নারী। তাঁর মোটেও সহ্য
হলনা।
তিনি
মনে মনে বললেন,
" কি এত
বড় আস্পর্ধা!
আমাকে
বাইরের নারীর সামনে কালো বলা!
আমিও
দেখিয়ে দেব আমার প্রকৃত স্বরূপ।
মনের দুঃখে গঙ্গায় গিয়ে তপস্যা
শুরু করলেন কালী। নিজের গায়ের
কৃষ্ণকোষগুলি একে একে পরিত্যাগ
করলেন। যেন খোলস ছাড়ছেন তিনি।
দ্বিখণ্ডিত ব্যাক্তিত্ত্ব
বা স্প্লিট পার্সোনালিটি বলে
যাকে। কালো রং অনায়াসে বদলে
ফেলে কালী হলেন গৌরী ।
এবার
ঝাঁটারূপেণ সংস্থিতা হয়ে
গৌরী অপ্সরাদের সম্মুখে এসে
হাসিমুখে বললেন,
-এবার
বুঝতে পারছো তোমরা?
নেশাভাঙ
করে, ছাইভস্ম
মেখে তোমাদের শিবুদার মাথাটা
এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেছে।
আমায় বলে কিনা নতুন বৌ!
আমার
সংসারে কত্ত কাজ আর আমি নাকি
এখন নাচ-গান
শুনব? তা
মেয়েরা, তোমরা
আজকাল বুঝি একটু বেশী খাচ্ছো।
নাচের ফিগারটাতো নষ্ট করে
ফেলেচো দেকচি। আমার বাবার
আমল থেকে তো তোমাদের জানি ।
হেলেন, মিস
শেফালি মার্কা ধুবলা পাতলা
ছিলে সব! বলি
এহেন বপু নিয়ে বালা নাচো কি
করে ? তার
চেয়ে আগে একটু মেদ ঝরাও,
তারপর
না হয় এসো কৈলাসে। আমি ফরাস
বিছিয়ে, আতর
ছড়িয়ে, অম্বুরী
তামাক সেজে বসে থাকব তোমাদের
জন্যে।
এদিকে
অপ্সরাদের সামনে তো তিনি গৌরী
ওদিকে আড়ালে অন্তঃপুরে আবার
তিনি অভিমানে জর্জরিতা কালী
। শিবুদার সেদিন কালরাত্রি।
কালীর সাথে সেরাতে ভেট হবার
কথা নয়। কিন্তু পান্ডববর্জিত
স্বামীর ঘরে শাশুড়ি-ননদের
কাঁটাও নেই। অগত্যা সেরাতেই
ফর্দা ফাঁস।কিন্তু অন্তঃপুরে
বৌকে খুঁজে পেলেননা শিবুদা।
বিস্মিত শিবুদা নারদকে সব
খুলে বললেন। নারদ একাধারে
স্বর্গের গেজেট অন্যধারে
রয়টার। খবর সংগ্রহ করতে তার
জুড়ি নেই। অচিরেই খবর নিয়ে
জানালেন শিবুদার বৌ কালী
সুমেরু পর্বতের মাথায় এক
দুর্গম স্থানে অভিমানে গোঁসাঘরে
। নারদ তো পাঁচা করতে ওস্তাদ
। তিনি সাপের গালেও চুমু খান,
ব্যঙের
গালেও চুমু খান। কালীর কাছে
হাজির হয়ে তাঁর গোঁসার কারণ
জানতে চাইলেন। কালী বললেন,
শিবুদা
তাঁর বিহনে কেমন আছেন?
নারদ
বললেন্, খাসা
আছেন। কালীর জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র
হেলদোল নেই। তিনি এখন পুনরায়
বিয়ে করার জন্য বিজ্ঞাপন
দিচ্ছেন।
কালী
সেই কথা শুনে রেগে আগুণ,
তেলে
বেগুণ হয়ে ষোড়শী মেয়ের রূপ
ধরে এক ছুট্টে শিবুদার কাছে
এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
তুমি
ভুলে গেলে তোমার প্রতিজ্ঞা?
আমায়
বিয়ে করে আবারো তুমি বিয়ে করতে
চলেছো? সেই
কথা শুনে শিবুদা তো মহা খুশি।
ভাবলেন নারদকে পাঠিয়ে কাজ হল
। কালীকে জড়িয়ে ধরে হামি খেতে
খেতে বললেন,
আমি যে
কে তোমার, তুমি
তা বুঝে নাও। আমি চিরদিন তোমারি
তো থাকব, তুমি
আমার, আমি
তোমার....ব্লা,
ব্লা,
ব্লা ।
আজ থেকে তোমার এই মহাবিদ্যারূপের
নাম দিলাম ভুবনেশ্বরী।
No comments:
Post a Comment