জগার
কেরামতি দেখলাম ভোররাতে ।
তেনার রথ চলবে বলে অঘোষিত
বিষ্টি এল আষাঢ়ী এক ভোরে।
নিজের চলার পথ ধুয়ে শুনশান্!
কি স্বার্থপর
রে বাবা! তারপর
আবার যে কে সেই!
তুমি
ঠুঁটো! তোমার
দুপাশের মানুষজনেরা তো স্বাধীন
ভারতের রাষ্ট্রপতির মত। তোমার
ইচ্ছায় কর্ম তাদের । তুমি
না চাইলে চলবেনা,
না বললে
বলবেওনা । একজন তো সোমরসে চুর!
কাঁধের
লাঙল কাঁধেই থাকে । কাজের
বেলায় তুমি। আরেকজন তো অর্জুনের
সাথে পালালো..তাও
তোমার প্ররোচনায় !
বাব্বা
! পারেও
বটে । হাত নেই তাতেই একাই ১০০
! হাত
থাকলে না জানি কি হত!!!
আমি
জগাদার খোদ পাড়ায় গেলে
সেখানে তারা ছুঁতেই দেবেনা
জগাদার গা!
ফেল কড়ি
মাখো তেল্!
তবে কড়ি
ফেললে জগাদার চ্যালারা মহা
খুশি । যা চাইবে তাই করতে দেবে
। বললে জগাদার সাথে তোমার
সিনেমার টিকিটও কেটে দেবে ।
ঘষ্টে ঘষ্টে জগাদা তোমাকে
নিয়ে হলে পৌঁছে যাবে । গায়ে
গা ঠেকিয়ে বসবে এসি হলে ।
মিষ্টি মিষ্টি রসালো কথা কইবে
। পকেটে প্যাঁড়া,
নিমকি,
খাজা-গজা
সব দেখিয়ে বলবে বের করে নিতে
। জগাদা বেঁড়ে লোক । চোখে
একটু কম দ্যাখে এই যা । বড়
বড় গোল্লা গোল্লা চোখ হলে
যা হয় আর কি !
দূরদৃষ্টি
বেশি কিন্তু কাছের লোককে একটু
কম দ্যাখে । তাই আমাদের দেখতে
পায়না । otherwise
ঠিকঠাক
সব !
আমি
বল্লুম, একটা
সেলফি তুলতে দেবে আমার জগাদার
সাথে? পান্ডাটা
বল্ল, তর
মনে? সেলফোন
নিয়ে জগোন্নাথো মন্দিরে ঢোকা
বারণ অছি। আমি বল্লুম,
আমাকে
গেটেতো আটকালোনা। পান্ডা তখন
বল্ল, কিছু
কড়ি ছাড়ো, মু
এলাউ করি দিব। জগাদার সাথে
তোমার সেলফি আমিই তুলে দিব।
অগত্যা একটা চকচকে পাতি বের
করে তার হাতে দিলুম। তারপর
তিনজনের পাশে দাঁড়িয়ে যেই
ছবিখানা তুলে দিতে বলেচি তখন
ব্যাটা বলে ,
উঁহু!
শুধু
জগোন্নাথেরো সঙ্গে ফটোর কথা
ছিল, বাকীরা
ছবিতে এলে আরো পৈসা লাগবে।
আমি বল্লুম,
থাক আমার
সেলফি লাগবেনা,
আমাকে
টাকাটা ফেরত দাও তবে। সে তখন
আমার মাথায় একটা চটাস করে
লাঠিপেটা করে বলল,
মু আর
তুমারে ছাড়িচিনা। তুমি বেশ
শহুরে যুবতী,
দেখিব
ছাতি। আমি বল্লুম,
এ তো পুরো
মন্দিরের মধ্যে মানহানি!
জগাদাকে
প্রাণপণে ডাকতে লাগলুম। বাঁচাও
জগাদা! তোমার
কাছে এসে শেষ অবধি এসব কি!
বল্লুম,
ঠিক আছে
পয়সা ফেরত চাইনা আমি,
একটা গান
শোনাবে? সেই
ধড়িবাজ পান্ডা তখন পান খাওয়া
রাঙা ঠোঁটে গাইতে শুরু করলঃ
কঁড়
কঁড় কৌচি,
বাঁশুরী
বাজাউচি,
বামেতে
বসিগিড়ি রসমতী রাই,
ঠাকুর
দরশন মিলিবেনা কাঁই!
আমি
মানে মানে কেটে পড়লুম সে যাত্রায়
। গর্ভগৃহের বাইরে পা দিয়েচি
অমনি সে পেছন থেকে এসে আমার
মাথায় আবার লাঠিপেটা করে বলল,
ধাঁই
কিড়িকিড়ি,
পটাকা
তিলা, নিতাই
গো মোর তিহিলা মিঠা
সেই
তো অসিতো,
বলিকা
সুন্দরী,
মদনমোহন
পিঞ্জরিতে পাখী পুষিতো...
আমি
ছুট্টে মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে
বাঁচি আর কি!
রথের
দিন সকাল সকাল উঠে সাজতে গুজতে
দোল ফুরোয় জগাদা এন্ড কোম্পানির।
প্রতিবছর ঐদিনে জগাদার
সহজসঙ্গিনী মা বিমলা ভৈরবীর
বড্ড গোঁসা হয়। রথে চড়তে না
পারায় বিমলার খুব আক্ষেপ ।
উগরে দেন ঝাঁঝ..
"সংসার,
বিশ্ব
ব্রহ্মান্ড রসাতলে গেল । আর
তিনি কিনা ভাইবোনকে বগলে করে
বেড়াতে চললেন্!
আদিখ্যেতা
যত্তসব্! আর
আমি একলাটি রইনু পড়ে ঘরের
কোণে । মিন্সে,
মাসীর
বাড়ি যাবার আর সময় পেলনা?
শেষ একমাস
সেই চানযাত্রার দিন থেকে দরজা
বন্ধ করে বসে আছেন বাবুরা সব্!
মুখ
দেখাদেখি বন্ধ দুনিয়ার সাথে
। কি না জ্বর এয়েচে ওনার ।
জ্বর যেন কারো হয়না । ভালো
ভালো সব খাবার খাব অথচ একটা
প্যারাসিটামল বড়ি গিলবনা
! কিনা
ওষুধ খেতে বমি পায় । বোঝো
ঠ্যালা । আসলে কাজে ফাঁকি
দিয়ে দরজা বন্ধ করে একমাস
ধরে এই প্যাকেজ ট্যুরের প্ল্যান
করে তিনটিতে মিলে । ধড়িবাজ
ননদ আমার । উনি নাকি সুভদ্রা
। আদৌ ভদ্রতা জানে কি ?
নয়ত
প্রতিবার যাবার আগে আমাকে
একটিবারও বলে না যে বৌদি এবারটা
চলো আমাদের সাথে ।
আর
তেমনি চালাক ভাসুরটাও । ভালো
ভালো রান্না খেতে ইচ্ছে হলে
বৌদি । আঙুরের রস করে দেবার
বেলায় বৌদি । কাট্গ্লাসের
সুরাপাত্র কিনে আনার বেলায়
বৌদি । ফ্রিজে বরফ বসানোর
বেলায় বৌদি । আর সেই বৌদিটাকে
এখন মনে পড়েনা !
আসলে
পালের গোদা তো ঐ ঠুঁটো মিন্সেটা
। তার কত্ত বায়না সামলাই এই
আমি ঘেটো মড়া মেয়েছেলেটা
। একশো আট রকমের হালুয়া,
বত্রিশ
রকমের মুচমুচে নিমকি ,
ছাপ্পান্ন
রকমের পদ । সব ঠিকমত হচ্ছে কি
না সব তদারকি করি সারাটি বছর
ধরে ।
আর
আমার বেলায় আমড়ার আঁটিও
জোটে না একটা । পরের বছর থেকে
আমার রথ চাই এই বলে দিলুম মিনসে!
নয়ত
দেখব কে তোমাকে রথে চড়ায়!
আর মাসীটাও
হয়েছে তেমন যত তেল দেয় এই
বোনঝি-বোনপো
তিনটেকে । সারাবছর তো এরা
মাসীকে ঝিঙের বাড়ি মারলেনা
তবুও বোকা মাসীটা এলাহি আয়োজন
করবে এদের জন্যে সাতদিন ধরে
"
বুঝতাম
তুমি তেমন একটা কেউকেটা তাহলে
তো তোমার নিদেন ফেসবুকে একটা
একাউন্ট থাকত!
আমরা
সেখানেই জয় জগন্নাথস্বামী
নয়নপথগামী বলে চিত্কার করে
মরতাম ! তাহলে
বিমলিপিসিও অত রেগে যেতনা
! না
আছে ফেসবুকে তোমার একটা
সেলিব্রিটি পেজ,
না আছে
নিজস্ব প্রোফাইল ।সারাদিন
নিজের স্নান্,
ভৃঙ্গার্,
শৃঙ্গার
আর একশো আট রকমের মন্ডা মিঠাই,
বত্রিশ
রকমের ভাজাভুজি আর ছাপ্পান্ন
ব্যঞ্জন খেতেই ব্যস্ত!
দুনিয়াটা
দ্যাখো জগাদা!
কত দিন
বলেছি তোমায়!
Go digital these days! নয়ত
এতদিনের ব্র্যান্ডের ব্যান্ড
বাজানোই বৃথা !
বিশ্বাস
করো জগাদা!
তুমি বড়
না শিব বড় তা আমার মত পাপীর
অজানা কিন্তু শিবরাত্রির
দিনে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ
মন্দিরে শিবলিঙ্গে জল ঢালার
অধিকার নেই আমার। বললুম,
আমি
বামুন-কন্যা,
আমি
বাড়িতেও শিবপুজো করি। গোদা
একটা মহাপুরুত আমাকে তার ইয়া
মোটা পেল্লায় বাহুমূলের খোঁচা
আর কনুইয়ের এক ঠোনা মেরে বললে,
"ত কি?
এ লিঙ্গ
অমার অচি"
আমি বললুম,
সে তো
জানি। কিন্তু শিবলিঙ্গ তো
আমাদের সকলের। পুরীতে গিয়ে
সেই এক অবস্থা। শঙ্করাচার্য
মন্দিরেও আমি অছ্যুত ভক্ত।
অগত্যা সমুদ্দুরের বালিয়াড়িতে
বসে মনের দুঃখে শিবলিঙ্ঙ গড়ে
জল ঢেলে শিবরাত্রি ব্রত করলুম।
তোমার অত বড় বড় চোখ হলে কি হবে
! তোমার
রাজ্যে তুমি সত্যি ঠুঁটো।
পান্ডাসর্বস্ব তোমার এক্তিয়ার
তোমার শুধু দেখনদারি। আজ
চন্দনযাত্রা,
কাল
স্নানযাত্রা,
পরশু
রথযাত্রা!